চোরের উপদ্রব নিয়ে সরব হয়েছেন দুর্গাপুরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাজ্য সরকারের সংস্থা ‘দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড’-এর (ডিসিএল) টাউনশিপের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, টাউনশিপের রাস্তায় আলো নেই। সন্ধ্যা হলেই আঁধার নামছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা।
রাজ্য সরকারের সংস্থা ডিসিএল গড়ে ওঠে ১৯৬৩ সালে। ফেনল, কস্টিক সোডা, ক্লোরিন, বেঞ্জিন-সহ বেশ কিছু রাসায়নিক ও তাদের উপজাত সামগ্রী উৎপাদন হত কারখানায়। ২০১৬ সালে ডিসিএলের বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় রাজ্য ক্যাবিনেটে। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর দূষণ ছড়ানো ও নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরামর্শে রাজ্যের শিল্প পুনর্গঠন দফতর কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। তার পর থেকে কারখানা বন্ধ পড়ে রয়েছে। টাউনশিপের দিকে কর্তৃপক্ষের নজর নেই বলে আবাসিকদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, রাস্তায় আলো জ্বলে না।
জানা গিয়েছে, প্রায় চারশো আবাসনের মধ্যে মাত্র ২১টিতে আবাসিকেরা রয়েছেন। তাঁদেরই এক জন অপূর্বকুমার রায়ের অভিযোগ, ‘‘রাত নামলে চোরেরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সামনাসামনি হয়ে গেলে রীতিমতো ধমক দিচ্ছে। বলছে, ‘জানলা বন্ধ করে থাকুন। বাইরে কী হচ্ছে দেখার দরকার নেই।’ আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’ আবাসিকদের দাবি, চালু কারখানা বন্ধ হওয়ার পরে টাউনশিপে যা যা সমস্যা তৈরি হওয়ার কথা, সেই সব সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। টাউনশিপের রাস্তায় আলো নেই। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। দুষ্কৃতীরা বন্ধ আবাসনের আলো, পাখা, দরজা, জানলা লোপাট করে দিয়েছে। এ বার যে সমস্ত আবাসনে আবাসিকরা রয়েছেন, সেগুলির দিকে দুষ্কৃতীদের নজর পড়েছে বলে অভিযোগ করেন কারখানার কর্মী সুভাষ রায়। তিনি বলেন, ‘‘আলো জ্বালালে দুষ্কৃতীরা আলো বন্ধ করার জন্য হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে আমরা রয়েছি।’’ গোপা মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা সব সময় আতঙ্কে আছি।’’ আবাসিকদের দাবি, পুলিশকে জানিয়েও কোনও ফল হচ্ছে না। যদিও পুলিশের দাবি, এলাকায় রাতে একটি টহলদার গাড়ি থাকে। আবাসিকদের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলেই তাঁরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে শহরে। দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘রাজ্য সরকারের দেউলিয়াপনার জন্য এই অবস্থা। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। টাউনশিপের আবাসিকদের সমস্যা দেখার কেউ নেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, ‘‘পুলিশ যদি চোরেদের সঙ্গে না থাকে, তা না হলে কি চোরেরা হুমকি দিতে পারে? তৃণমূল, পুলিশ সবাই রয়েছে দুষ্কৃতীদের পাশে। তাই এই অবস্থা।’’
পুলিশ যদিও এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আইএনটিটিইউসি-র দুর্গাপুর ৩ ব্লক সভাপতি কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিরোধীদের ভিত্তিহীন অভিযোগের কোনও জবাব হয় না। পুলিশ-প্রশাসন নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে। আমরাও আবাসিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাঁদের পাশে আছি।’’