ইভিএমে কারচুপি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে নানা সময় অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। পূর্ব বর্ধমানেও বেশ কিছু বুথে ইভিএম নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তৃণমূলের। ওই সব ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের ভোট মিলিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। জেলা তৃণমূল সভাপতি, কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী হাওয়া প্রবল। সে জন্য গণনাকেন্দ্রে বিজেপি সব রকম অপচেষ্টা করতে পারে। সেই দিকে নজর রাখার জন্য কাউন্টিং এজেন্টদের বলা হয়েছে।” বিজেপিও তাদের কাউন্টিং এজেন্টদের মাটি কামড়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জেলাশাসকের দফতরে গণনা নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক কে রাধিকা আইয়ার। সেখানে জানানো হয়, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গোলাপবাগের ইউআইটিতে। আর বর্ধমান পূর্বের গণনাকেন্দ্র করা হয়েছে সাধনপুরের এমবিসি পলিটেকনিক কলেজে। প্রতিটি বিধানসভার জন্য দু’টি করে ঘরে ২০টি টেবিলে গণনা হবে। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভায় ৩০৬টি ও বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে কাটোয়া বিধানসভায় ৩০১টি বুথ থাকায় সর্বোচ্চ ১৬ রাউন্ড পর্যন্ত গণনা হবে বলে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন। বর্ধমান পূর্বে পোস্টাল ব্যালট গণনা হবে ৫৪৮১টি আর বর্ধমান-দুর্গাপুরে হবে ৭৭৮২টি।
তৃণমূলের দাবি, ভোট গ্রহণের দিন বেশ কিছু বুথে ইভিএমের গোলমালের জন্য ভোট প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হয়। সেই সব বুথগুলিকে বিশেষ নজরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সব বুথের ভিভিপ্যাট ভাল ভাবে দেখার জন্য কাউন্টিং এজেন্টদের বলা হয়েছে। ইভিএমের সিল ঠিক রয়েছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি বিধানসভায় ২৫ জন করে প্রশিক্ষিত দলের কর্মীদের মঙ্গলবার, গণনা কেন্দ্রের কাজে লাগানো হবে। দুর্গাপুর, গলসি, মন্তেশ্বর, কালনা, কাটোয়া, পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ, রায়না, জামালপুরের কর্মীদের সোমবার রাতেই বর্ধমান শহরে চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের থাকার জন্য শহরের বেশ কিছু হোটেল ভাড়া করেছে তৃণমূল। বুধবারই মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে গণনাকেন্দ্রে যান বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী শর্মিলা সরকার।
কাউন্টিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে বিজেপিও। বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার সাধারণ সম্পাদক আশিস পাল বলেন, ‘‘কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়ে দলের তরফে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গণনার প্রতিটি বিষয় যাতে ঠিক ভাবে নজরে রাখেন তাঁরা, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান-দুর্গাপুরের দলীয় এজেন্টদের বাছাই করে প্রশিক্ষণও দেওয়া শুরু হলেও বর্ধমান পূর্ব লোকসভার ক্ষেত্রে এখনও বাছাই-পর্ব শেষ হয়নি। দলের নেতাদেরও গণনা কেন্দ্রে থাকার কথা বলা হয়েছে।
কাউন্টিং এজেন্ট বাছার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও সাহসের উপরে জোর দিয়েছে তৃণমূল। যে সব কর্মীরা এর আগে লোকসভা বা অন্য একাধিক নির্বাচনে কাউন্টিং এজেন্টের কাজ করেছেন এবং সাহসের সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়েছেন, তাঁদেরই এ বার এজেন্ট হিসেবে বাছা হয়েছে। কিছু নতুন মুখও আনা হয়েছে। যাঁরা ডাকাবুকো, তাঁদেরও গণনাকেন্দ্রে রাখা হবে। বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদের নির্বাচনী এজেন্ট আজিজুল মণ্ডল বলেন, “আমাদের কাছে কোন বুথের ইভিএম পাল্টানো হয়েছে, তার তালিকা রয়েছে। তা ধরে এজেন্টদের কী করতে হবে বলে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিধানসভায় এজেন্টদের প্রশিক্ষণ হয়েছে। শনি-রবিবার ফের কাউন্টিং এজেন্টদের সঙ্গে বসা হবে।”