শিলিগুড়িতে জলের সমস্যা এখনও মেটেনি। পানীয় জলের জন্য হাহাকার চলছে শহর জুড়ে। পুরসভা যে জল সরবরাহ করছে, তা পানের অযোগ্য। ফলে পানীয় জল জোগাতে কালঘাম ছুটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। কেনা জলই এখন ভরসা শিলিগুড়ির। কত দিন এই সমস্যা চলবে, বোঝা যাচ্ছে না। যদিও পুরসভার তরফে বলা হয়েছে, ২ তারিখ বিকেলের মধ্যে জলের সমস্যা মেটানো যাবে বলে তারা আশাবাদী। এর মাঝে জলের সমস্যা নিয়ে শুক্রবার দুপুর ১টায় সাংবাদিক বৈঠক করবেন মেয়র গৌতম দেব।
বুধবার রাতে গৌতম ঘোষণা করেন, পুরসভার সরবরাহ করা জল পানের অযোগ্য। শিলিগুড়িবাসীকে ওই জল খেতে নিষেধ করা হয়। বিকল্প হিসাবে পুরসভার তরফে পানীয় জলের পাউচ বিলি করার কথা জানান তিনি। বেশ কিছু জলের ট্যাঙ্কের মাধ্যমেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল সরবরাহ করার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, জলের পাউচে চাহিদা মিটছে না। ট্যাঙ্কের জলও পর্যাপ্ত নয়। মোট ২৬টি ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। শিলিগুড়িতে ওয়ার্ড সংখ্যা ৪৭টি। প্রতিটি ওয়ার্ডে এক বেলা করে জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো যাচ্ছে। যা পর্যাপ্ত নয়। যাঁদের জল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরা পুরসভার ওই ট্যাঙ্কের জন্যই অপেক্ষা করছেন। ট্যাঙ্ক এলে জলের কাড়াকাড়ি পড়ে যাচ্ছে। ভিড় সামলাতে কুপনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জলের দাবিতে পথে নামে শিলিগুড়ির বামেরা। প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পুরসভা ঘেরাও করা হয়। মেয়র এবং ডেপুটি মেয়রের গাড়িও আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। ওঠে ‘চোর-চোর’ স্লোগান। শেষমেশ অন্য গাড়িতে পুরনিগম এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন গৌতমরা।
সাধারণত তিস্তার জল পরিস্রুত করে শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছরের হড়পা বানে তিস্তার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষার আগে তা মেরামত করা প্রয়োজন। সেই কারণেই কিছু দিন তিস্তার জল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বিকল্প হিসাবে মহানন্দার জল পরিস্রুত করে সরবরাহ করছিল পুরসভা। বুধবার দেখা যায়, সেই জলে বিওডির মাত্রা বেশি। অর্থাৎ, মহানন্দার জল নিরাপদ নয়। তার পরেই ওই জল খেতে নিষেধ করেন মেয়র। যার ফলে শিলিগুড়িতে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
পুরসভার তরফে জানানো হয়েছিল, ২ জুনের মধ্যে জলের সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে তারা আশাবাদী। তত দিন জলের পাউচের মাধ্যমে শিলিগুড়িবাসীর তেষ্টা মেটানোর সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। তবে তা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। বেশির ভাগ মানুষ জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সুযোগে শিলিগুড়িতে শুরু হয়েছে জলের কালোবাজারি। দোকানি ইচ্ছামতো দামে জল বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারই মেয়র জানিয়েছিলেন, সকলকে একজোট হয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। এ নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভকেও ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এখন দেখার, তিনি সাংবাদিক বৈঠকে কী বলেন।