• রোজগারে টান, বাড়ছে পাচারের প্রবণতা?
    আনন্দবাজার | ৩১ মে ২০২৪
  • এক সপ্তাহে দু’বার সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতে। শরীরে লুকিয়ে তা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে এক মহিলা-সহ দু’জন। প্রশ্ন উঠছে, হিলির কাঁটাতারহীন সীমান্ত-গ্রাম হাড়িপুকুরকে ‘করিডর’ করে কি পাচারকারীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে?

    মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে কোটি টাকার উপরে সোনার বিস্কুট উদ্ধার হওয়ায় হিলি সীমান্তের ওই গ্রাম ছাড়াও সেখানকার আরও কয়েকটি এলাকা এখন আতশকাচের নীচে। হিলির গোবিন্দপুর, চকগোপাল, দক্ষিণপাড়া গ্রামগুলিতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে বিএসএফের দাবি। গত এক বছরে হিলি সীমান্তে আমদানি-রফতানি ব্যবসায় ভাটার টান, দাবি ব্যবসায়ীদের। ফলে বেশ কিছু কর্মী-শ্রমিক পরিযায়ী হয়েছেন। কেউ কেউ এলাকাতেই রয়ে গিয়েছেন। কর্মসংস্থান না থাকার জন্য আগে হিলি সীমান্তে পাচারই ছিল একটি বড় অংশের যুবকদের মূল রোজগার। সে প্রবণতা কি ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে? বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সোনার বিস্কুট হিলি থেকে বালুরঘাট এবং হাত ঘুরে কলকাতায় পাচারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ ওই দু’টি ঘটনার পরে হাড়িপুকুর এলাকায় বিএসএফ নজরদারি আরও আঁটসাঁট করেছে বলে জানানো হয়েছে। ওই দু’টি ঘটনায় পুলিশের তরফেও আলাদা করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল।

    হিলির ওই গ্রামগুলির একাংশে উন্মুক্ত সীমান্ত। প্রশাসন সূত্রে খবর, হিলি সীমান্তের প্রায় ২৫ কিমি এলাকায় এখনও কাঁটাতারের বেড়া বসানো যায়নি। সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে দেড়শো মিটার পরে, বেড়া বসানোর নিয়ম রয়েছে। ওই গ্রামগুলি শূন্য রেখা থেকে দেড়শো মিটারের মধ্যে অবস্থান করছে। ফলে, সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিতে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের জটিলতা রয়েছে বলে বিএসএফ সূত্রের দাবি। যার সুযোগ নিতে ফের পাচারকারীরা সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ। হিলির উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে কয়েক বছর আগেও নুন, নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ, সোনা পাচারের অভিযোগ ছিল। স্থানীয়দের দাবি, এখন নুন পাচার আর হয় না। তবে এ-পার থেকে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ ও-পারে পাঠাতে পাচারকারীরা সক্রিয়। একই ভাবে, বাংলাদেশ থেকে সোনার বিস্কুট হিলি দিয়ে ভারতে পাচারের চেষ্টা চলে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি হিলি সীমান্তে এক বার ছ’টি এবং এক বার ন’টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার করেছে বিএসএফ। বিএসএফ সূত্রে খবর, হাড়িপুকুরের বাসিন্দা খতেজা খাতুন শরীরে সোনার বিস্কুট লুকিয়ে উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে হিলিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। বিএসএফের জওয়ানেরা তাঁকে আটক করেন। মহিলার কাছ থেকে ছ’টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়। বিএসএফ জানায়, উদ্ধার হ‌ওয়া সোনার বিস্কুটের ওজন ৭০০ গ্রাম। বাজার মূল্য ৫১ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। শুল্ক দফতরের অপরাধ দমন শাখার মাধ্যমে জেল হেফাজত হয় ধৃতের। হাড়িপুকুর থেকেই জিন্নাত আলি মণ্ডল নামে আরও এক যুবকের শরীর থেকে এক কেজি ৪০ গ্রাম সোনা উদ্ধার হয় দিন পনেরো আগে। বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকা।

    পর পর সোনা উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয় ভাবে রোজগারের অভাবের প্রশ্নও সামনে এসেছে। একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকায়, রোজগার বন্ধ। হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি ব্যবসা কমায় বহু শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাঁদের দাবি, বুধবার (২৯ মে) হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ৩৫টি পণ্যের ট্রাক বাংলাদেশে রফতানি হয়েছে। তার আগের দু’দিন রফতানি হয়েছে ৪৫টি ও ৪৭‌টি পণ্যের ট্রাক। ‘হিলি এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক ধীরাজ অধিকারী বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে বহির্বাণিজ্য কমে গিয়েছে। এক বছর আগে হিলি দিয়ে রোজ গড়ে ২৫০টি পণ্যের ট্রাক বাংলাদেশে রফতানি হত। গত আট মাস ধরে তা কমে গড়ে ৫০টিতে দাঁড়িয়েছে।’’ তিনি জানান, এর প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানের উপরেও। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে— তবে কি বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজতে স্থানীয়েরা ফের পাচারের দিকে ঝুঁকছেন?
  • Link to this news (আনন্দবাজার)