ভ্যান রিকশা চালিয়ে সংসার চালান ইংরেজবাজার শহরের বাসিন্দা দিলীপ হালদার। পরিচারিকার কাজ করেন তাঁর স্ত্রী। অভাবের সংসারেও তাঁদের বাজার থেকে পরিস্রুত পানীয় জলের ৩০ লিটারের জার কিনতে হয় বলে দাবি। দিলীপ বলেন, “এক জার জলের দাম ৩০ টাকা। মাসে কম পক্ষে ৫০০ টাকার জল কিনে খেতে হয়।” তাঁর মতোই কেনা জলের উপরে নির্ভরশীল মহানন্দা নদীর দুই পারের শহর ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহের বহু মানুষই। অথচ, কোটি কোটি টাকা খরচে তৈরি পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প রয়েছে ওই দুই শহরে। পুরসভার তরফে তা বাড়ি-বাড়ি সরবরাহও করা হয়।
তার পরেও কেনা জলের প্রতি কেন ঝুঁকছেন শহরবাসী? ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ শহরের মধ্যে দিয়ে মহানন্দা নদী বয়ে গিয়েছে। মহানন্দা নদীই ছিল দুই শহরের মানুষের লাইফ লাইন। নাগরিকদের দাবি, এখন সে নদীই ধুঁকছে। কারণ, দুই শহরের অধিকাংশ নর্দমার জল সরাসরি মহানন্দায় মিশে যাচ্ছে। গরমে নদী কার্যত শুকিয়ে গিয়েছে। তার উপরে নদীতে গিয়ে মিশছে নর্দমার জল। নদীর পারে দুই শহরের একাধিক খাটাল রয়েছে। রয়েছে আবর্জনার স্তূপও। পুরাতন মালদহের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব সুকুমার মণ্ডল বলেন, “ছেলেবেলাতে বন্ধুদের সঙ্গে মহানন্দা নদীতে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা সাঁতার কেটেছি। নদীর জলে মা ভাত, ডাল রান্না করেছেন। এখন সে জলে স্নান করলে হাত-পা চুলকোচ্ছে।”
মহানন্দা নদীর এই অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন নদী বিশেষজ্ঞরাও। ইতিমধ্যে, শিলিগুড়িতে মহানন্দা নদীর জল দূষিত বলে রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসায় সেখানে পুরসভা পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্য রূপক দেবশর্মা বলেন, “মালদহে মহানন্দা নদীর জল আরও দূষিত। নদীর জল পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। মহানন্দা নদী থেকে জল তুলে তা পরিস্রুত করে শহরের বাড়ি-বাড়ি সরবরাহ করা হয়।” পুরসভার দাবি, ১১১ কোটি টাকা খরচে ইংরেজবাজারের দৈবকিপুরে জল সরবরাহ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। মহানন্দা নদী থেকে জল তুলে তা পরিস্রুত করার পরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে শহরের ২৯টি ওয়ার্ডে বাড়ি-বাড়ি সরবরাহ করা হয়। পুরাতন মালদহের জন্যও পৃথক প্রকল্প রয়েছে। তা থেকে শহরে ২০টি ওয়ার্ডে জল সরবরাহ করা হয়।
এ বার ভোট-প্রচারে মহানন্দার দূষণেয়ে বিজেপি নেতারা সরব হন। দলের দক্ষিণ মালদহ সহ-সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “শিলিগুড়ি শহরে জল পরীক্ষার রিপোর্ট লুকানোর চেষ্টা হয়েছিল। পরে প্রকাশ করা হয়। মালদহেও জল পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক।” ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “পুরসভার পরিস্রুত জলে কোনও ভয় নেই। মহানন্দা নদীর দূষণ ঠেকাতে আমরা তৎপর। নর্দমার জল নদীতে পরিস্রুত করে ফেলার পরিকল্পনা চলছে।” পুরাতন মালদহের পুরপ্রধান কার্তিক ঘোষও দাবি করেন, “পানযোগ্যতার দৈনিক পরীক্ষা করে জল সরবরাহ করা হয়। আমাদের জলে কোনও বিপদ নেই।”