লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় বাংলার যে ৯টি কেন্দ্রে নির্বাচন, তা কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসের গড়। গত লোকসভা ভোটে ওই ৯টি আসনেই জিতেছিল তৃণমূল। এমনকি, ২০২১-এ ওই লোকসভাগুলির মধ্যে ভাঙড় ছাড়া প্রায় সব বিধানসভাতেও জিতেছিল তারা। এমন নির্বাচনী পরিসংখ্যান সত্ত্বেও শেষ পর্যায়ে অন্তত ৪টি আসনে ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিজেপি। সেই জন্য বিজেপির মূল লক্ষ্য, ভোটারদের বুথমুখী করানো এবং বুথ রক্ষা করা।
ভোট দক্ষিণবঙ্গে ঢোকার পরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের মতো অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে বিজেপি-সহ বিরোধীদের। এমনকি, বিজেপির একাধিক প্রার্থী কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের সমালোচনা করেছিলেন। যদিও শেষ দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অন্য ভূমিকায় দেখা যাবে বলে আশাপ্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দু-সহ বিজেপির তাবড় নেতৃত্বকে।
বিজেপির অন্দর মহলের দাবি, এই দফার ৯টি আসনের মধ্যে মথুরাপুরে জয় প্রায় নিশ্চিত। ‘ইতিবাচক’ ফলের সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতা উত্তর, দমদম এবং বারাসতেও। এ ছাড়া, বসিরহাটের সন্দেশখালি, বসিরহাট দক্ষিণ ও হিঙ্গলগঞ্জ বিধানসভা এলাকা থেকে বড় ব্যবধান নিয়ে লড়াই জমানোর আশা করছে রাজ্য বিজেপি।
কিন্তু কোন অঙ্কে ঘাসফুলের শক্ত মাটিতে পদ্মফুল ফুটবে, বিজেপিতে চর্চা তা নিয়ে। এই সূত্রেই বিজেপি নেতৃত্বের মুখে ‘বুথ আগলানোর’ কথা শোনা যাচ্ছে। কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের বক্তব্য, “মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, সেটাই চেষ্টা করব।” দমদমের প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত আবার জানাচ্ছেন, জিততে গেলে যা-যা করা দরকার, সবই করা হয়েছে।
বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষের দাবি, “বুথ জ্যাম করে ভোট লুট হতে দেব না!” কার্যত একই কথা বলছেন কলকাতা দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীও। তিনি এ-ও জানাচ্ছেন, চলে যাওয়া ও মৃত ভোটারদের ভোট তৃণমূল যাতে না দিতে পারে, সে দিকে নজর রাখা হবে। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের ভোটারেরা যাতে দ্রুত ভোট দিতে পারেন, সেই চেষ্টা করা হবে। এই লোকসভার নানা জায়গার মানুষ হয় ভোট দিতে যান না। অথবা, তাঁদের ভোট দিতে যেতে দেওয়া হয় না। সেটা রুখব।”
যদিও ভোটের আগে সন্ত্রাসের ‘চেনা অভিযোগই’ ধরা পড়েছে ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ (ববি) দাসের কথায়। তাঁর দাবি, “প্রতিটা বিধানসভায় হাজারখানেক দুষ্কৃতী ঢুকিয়েছে। পুলিশ বলছে, ‘আমরা চাই না কোনও ঘটনা ঘটুক। আপনি দয়া করে কোথাও যাবেন না’।” তাঁর আরও অভিযোগ, ফলতায় তিন-চার হাজার দুষ্কৃতী রয়েছে। ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান অভিজিৎ। তাঁর বক্তব্য, “কমিশনকে বলছি। ওরা বাহিনী পাঠাচ্ছে স্থানীয় পুলিশের রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে। তল্লাশি করতে গেলে স্থানীয় পুলিশ আগে থেকে খবর দিয়ে দিচ্ছে!”