শিলিগুড়ি পুরসভায় পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে এ বার আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে বিজেপি। জনস্বাস্থ্য নিয়ে যে ভাবে ‘ছেলেখেলা’ হয়েছে, তা নিয়ে মামলা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন শিলিগুড়ির পদ্ম বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, শুধু তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাই নয়, প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও গোটা ঘটনার জন্য দায়ী।
গত বুধবার থেকে জলকষ্ট দেখা গিয়েছে শিলিগুড়িতে। পুরসভার জল কয়েক দিন পান করতে নিষেধ করেন মেয়র গৌতম দেব। কারণ হিসাবে জানা যায়, সিকিমে বাঁধ ভেঙে তিস্তা নদীতে বিপর্যয়ের কারণেই এই জলসঙ্কট। গজলডোবায় বাঁধ মেরামতির কারণেও তিস্তা থেকে জল উত্তোলন বন্ধ। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে মহানন্দার জল পরিস্রুত করে ব্যবহার করা হচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি রিপোর্টে দেখা যায়, ওই জলে বিওডি (বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) মাত্রা বেশি! তার ফলে ওই জল আর পান করার উপযুক্ত না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় পুরসভার তরফে। এ নিয়ে জোর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে শিলিগুড়িতে। বৃহস্পতিবার পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বাম-বিজেপি। মেয়রের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
শুক্রবার শঙ্কর জানান, এই পরিস্থিতিতে তাঁরা আদালতে জনস্বার্থ মামলা করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে যে ছেলেখেলা শিলিগুড়ি পুরসভা করেছে, তা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হবে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতে, তাদের কী হওয়া উচিত, সেই মামলাতেই বোঝা যাবে। ২ জুনের মধ্যে যদি পানীয় জলের পরিষেবা ঠিক না হয়, তা হলে পুরসভার সামনে ধর্নায় বসব।’’
এ নিয়ে মেয়র গৌতম বলেন, ‘‘স্বাগত জানাই। আদালতে যাওয়ার অধিকার সকলের আছে। এগুলো রাজনৈতিক গিমিক। আমার মনে হয় না, ৪ তারিখের পর ওরা মামলা করার মতো পরিস্থিতিতে থাকবে।’’
শিলিগুড়িতে জলসঙ্কটের জন্য অশোককেও দায়ী করেছেন শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘উনি আমার রাজনৈতিক শিক্ষক। ওঁর কাছ থেকে প্রচুর শিখেছি। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব অশোকদাকেও দিতে হবে। ফুলবাড়ি ওয়াটার ট্রিটেমেন্ট প্ল্যান্টের মধ্যে দিয়ে শিলিগুড়িকে উনি পরিস্রুত পানীয় জল দিয়েছেন। কিন্তু বর্ধিত শিলিগুড়ি ও তার জনসংখ্যার কারণে যে জলসঙ্কট বাড়বে, সেটা মাথায় রেখে কেন বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তার জবাব দিতে হবে।’’ বিধায়কের সংযোজন, ‘‘অশোকবাবু যখন পুরসভার মেয়র ছিলেন, আমি মেয়র পারিষদ ছিলাম। জল নিয়ে অশোকবাবুকে যে ভাবে অপদস্থ করা হয়েছে, তার সাক্ষী আমি। কাজেই জল নিয়ে কাউকে দোষারোপ করার জায়গায় নেই তৃণমূল। গৌতমবাবুর নিজের ভুল স্বীকার করা উচিত। যে জল গত ২০ দিন শহরের মানুষকে খাওয়ালেন, কাদের ত্রুটি ছিল, কেন প্রতিনিয়ত পরীক্ষা হয়নি? এ সবের জন্যই আমাদের জনস্বার্থ মামলা।’’
শঙ্করের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অশোক বলেন, ‘‘উনি ভাল করেই জানেন আমরা কী করেছি না-করেছি। উনিও যে জল পান করছেন, সেটাও বামফ্রন্টের সময়েই করা। আমি মন্ত্রী ছিলাম তখন। রিজার্ভার তৈরি করা থেকে সবটাই করেছি। বিকল্প ব্যবস্থার প্রকল্পের নকশা তৈরি করে রাজ্য সরকার মারফত দিল্লিতে পাঠানোর কথা ছিল। আমরা কলকাতা পর্যন্ত ছুটেছি। অবস্থান বিক্ষোভ করেছি। সেখানে তো শঙ্কর নিজেও উপস্থিত ছিলেন। আমরা কী করেছি, উনি জানেন না! উনি ভালই জানেন।’’