কলকাতার ভোটে বহিরাগত ‘দাদা’ ও তাদের বাহিনীর দাপটের অভিযোগ উঠেছে বার বার। বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসে ঝামেলা পাকানো, বিরোধীদের মারধর করা বা ভোটারদের বাধা দেওয়া— বিভিন্ন সময়ে এই জাতীয় অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনে। এ বার শহরতলির অধিকাংশ জেলাতেই ভোটপর্ব মিটে গিয়েছে। ফলে, শেষ দফায় কলকাতার ভোটে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি থেকে বাহুবলী দাদারা এ বারও শহরে ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে। এই বহিরাগত গুন্ডাদের দাপটে ভোটের শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। কলকাতা পুলিশ যদিও বহিরাগতদের আটকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে।
কলকাতার ভোটে বহিরাগতদের নিয়ে এসে ‘দাপট’ দেখানোর অভিযোগ নতুন নয়। পুরসভা থেকে শুরু করে লোকসভা— বার বারই এমন অভিযোগ সামনে এসেছে। কখনও শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। কখনও আবার পাল্টা শাসকদল অভিযোগ তুলেছে, বিরোধীদের সংগঠনের জোর না থাকায় তারা বাইরে থেকে লোকজন এনে ভোটে জেতার চেষ্টা করছে। কলকাতায় শেষ বার ভোট হয়েছিল ২০২১-এর ডিসেম্বরে। বিধানসভা ভোটের পরে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে শহরতলি থেকে লোকজন আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বুথ চত্বরের পাশাপাশি পাড়ার মোড়ে মোড়ে, ক্লাবে ক্লাবে অচেনা মুখের ভিড় চোখে পড়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। সকাল থেকে বহিরাগতদের দাপটে একাধিক জায়গায় বাসিন্দারা ভোটই দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। যাদবপুর এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘শেষ বার যখন ভোট দিতে গিয়েছিলাম, বুথের কিছুটা দূরে পৌঁছতেই কয়েক জন বলল, আমার ভোট নাকি পড়ে গিয়েছে। যারা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, তাদের কাউকেই আমি চিনি না। পরে জানতে পারি, শুধু আমি নই, আমার মতো অনেকেরই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল।’’
কাল, শনিবার লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় ভোট গ্রহণ হবে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি কেন্দ্রে। কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ ছাড়াও যাদবপুর কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে ওই দিন। পার্শ্ববর্তী জেলা হাওড়া, হুগলি বা বর্ধমান, নদিয়ায় ভোট মিটে গিয়েছে। এ বার ওই সমস্ত জেলা থেকে বহিরাগতদের শহরে ঢোকার আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশের তরফে যদিও বহিরাগতদের আটকাতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। ভোটের এক দিন আগে থেকেই শহরে নামছে অতিরিক্ত বাহিনী। শহরে ঢোকার ও বেরোনোর সমস্ত জায়গায় বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া, শহরের ৪৫টি জায়গায় বিশেষ নাকা তল্লাশির ব্যবস্থা থাকছে। গাড়ি ধরে ধরে তল্লাশির পাশাপাশি কী কারণে শহরে আসা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। এক দিন আগে থেকে শহরের ক্লাব, কমিউনিটি হল বা হোটেলগুলিতে যাতে অবৈধ জমায়েত না হয়, তা-ও খতিয়ে দেখবে পুলিশের বিশেষ দল। প্রতিটি থানার পাশাপাশি লালবাজারের বিশেষ দল নজরদারি চালাবে। ভোটের দিন বেআইনি জমায়েত-সহ যে কোনও গন্ডগোল সামলাতে বিশেষ ‘কুইক রেসপন্স টিম’ থাকবে প্রতিটি ডিভিশনে।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘নির্বাচন ঘিরে যাতে অশান্তি না হয়, তা দেখা হচ্ছে। বহিরাগতদের আটকাতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও বেআইনি ঘটনা ঘটলেই দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’