ঝাড়ফুঁকের নামে ওঝার শারীরিক অত্যাচারে মৃত্যু হল এক বধূর। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের নেন্দ্রা এলাকার ঘটনা। জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল বলেন, ‘‘এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে সচেতনতা বাড়ানো হবে।’’
হরিরামপুরের বড়গ্রামের মুশন এলাকার বাসিন্দা বুধু হেমব্রমের মেয়ে বাসন্তী হেমব্রমের (১৮) সঙ্গে কয়েক মাস আগে হরিরামপুরের নেন্দ্রার মোল্লাপুকুর গ্রামের শ্রীনাথ হাঁসদার বিয়ে হয়। কয়েক দিন আগে বাসন্তী অসুস্থ হলে, তাঁর স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন ‘ডাইন’ ভর করেছে সন্দেহে ছানু মুর্মু নামের এক ওঝার কাছে নিয়ে যান। অভিযোগ, সে সময়ে ‘ডাইন’ তাড়ানোর নামে ঝাঁটা ও ধাতব বস্তু দিয়ে বাসন্তীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়। খবর পেয়ে বাসন্তীর বাবা এলাকায় পৌঁছন। তাঁর আরও অভিযোগ, গুরুতর আহত বাসন্তীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও বাধা দেওয়া হয়।
অবশেষে বুধবার জখম এই বধূকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে বৃহস্পতিবার হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। রাতে হরিরামপুর থানায় ছানু, বাসন্তীর স্বামী শ্রীনাথ ও বাসন্তীর শ্বশুরবাড়ির চার জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন বুধু। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে নির্মম অত্যাচার করে মারা হল। এর বিচার চাই। পুলিশ কড়া শাস্তি দিক।’’ অভিযোগ পেয়েই অভিযুক্ত স্বামী শ্রীনাথ ও ছানু-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে শুক্রবার গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতে তোলে পুলিশ। বিচারক ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ঘটনার পরেই বাকি অভিযুক্তেরা পালিয়ে গিয়েছে বলে খবর।
স্থানীয় শিক্ষক, সমাজকর্মী দুর্গা সোরেন বলেন, ‘‘এই যুগেও গ্রামে-গঞ্জে ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটছে। এটা চিন্তার বিষয়। আমরা এ নিয়ে প্রচার করছি, যাতে সচেতনতা বাড়ানো যায়। প্রশাসনেরও গ্রামের দিকে নজরদারি বাড়ানো উচিত।’’