শিবেই ভরসা সায়নীর! নিজের কেন্দ্রে ভোটের দিন পুজো দিলেন যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী
আনন্দবাজার | ০১ জুন ২০২৪
নির্বাচনী প্রচারের শুরুতেই শিবলিঙ্গে পুজো দিয়েছিলেন সায়নী ঘোষ। প্রায় আড়াই মাস পরে যখন নির্বাচনের দিন এল, সে দিন সকাল সকাল হাজির হলেন পাড়ার শিবমন্দিরে। শিবলিঙ্গের মাথায় দুধ ঢেলে পুজো দিলেন সায়নী। ফুল-মোমবাতি-ধূপ দেখিয়ে আরতিও করতে দেখা গেল তাঁকে।
কন্ডোম বিতর্ক এখনও পিছু ছাড়েনি অভিনেত্রীর। শিবলিঙ্গে জন্মনিরোধক পরানোর ছবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন টলিউডের অভিনেত্রী। পরে অবশ্য সেই বিতর্কের জেরেই সায়নীর রাজনীতিতে আগমন। এবং একাদিক্রমে তৃণমূলের বিধানসভার টিকিট লাভ এবং দলের যুবনেত্রীর পদে অভিষেক। এখন তিনি যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। গত ১০ মার্চ তৃণমূলের ব্রিগেডের সভা থেকে যাদবপুরের প্রার্থী হিসাবে সায়নীর নাম ঘোষণার দিন পনেরোর মধ্যেই যাদবপুরে শিবলিঙ্গে পুজো দিয়েছিলেন সায়নী। তার পরে টানা প্রায় আড়াই মাস ভোটের প্রচার করেছেন। শনিবার লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় ভোট ছিল তাঁর কেন্দ্রে। আড়াই মাসের পরিশ্রমের পর সায়নীর অগ্নিপরীক্ষা। দেখা গেল সায়নী ভরসা রেখেছেন সেই শিবেই।
যাদবপুরে ভোটের দিন সকালেই তিনি পৌঁছে যান পাড়ার শিবমন্দিরে। সবুজ পাড় গেরুয়া আঁচলের সাদা শাড়িটি গায়ে জড়িয়ে শিবলিঙ্গের সামনে বসে পুজো করেন সায়নী। তার পরে একে একে পুজো করেন মন্দিরের অন্য দেব-দেবীর মূর্তিকেও। মোমবাতি এবং ধূপ দেখিয়ে আরতিও করতে দেখা যায় তাঁকে। শেষে কিছু ক্ষণ হাতজোড় করে প্রার্থনা করে মন্দির থেকে বেরিয়ে যান যাদবপুরের প্রার্থী। রওনা হন ভাঙড়ের দিকে।
প্রসঙ্গত ২০১৫ সালে সায়নীর এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে একটি ছবি শেয়ার করা হয়। ছবিটি শিবলিঙ্গের। তাতে কন্ডোম পরাচ্ছেন এক মহিলা। ছবি দেখে বোঝা যায় এড্স সচেতনতার বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’র ছবিও ছিল বিজ্ঞাপনটিতে। নীচে লেখা, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। সায়নীর অ্যাকাউন্ট থেকে করা ওই পোস্টের বিবরণে লেখা ছিল, ‘‘ভগবান এর থেকে বেশি কার্যকরী আগে কখনও হননি!’’ সেই পোস্ট ঘিরেই বিতর্ক শুরু হয়। সায়নীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার অভিযোগ করেন অনেকে। ওই পোস্টের প্রায় ছ’বছর পরে সায়নীর বিরুদ্ধে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি শিবের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে শিবের পুজো দেওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেছিলাম। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের এই ছবিটি দেখে আমার ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে। আমার আর্জি, আপনারা এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে।’’ সেই সময় সায়নী জানিয়েছিলেন, ২০১৫ সালে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ হয়েছিল। তিনি দেখার পরে ওই পোস্টটি ডিলিটও করে দেন। যদিও তাতে বিতর্ক থামেনি। এর পরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের টিকিট পান সায়নী। প্রচারে বিজেপি ওই প্রসঙ্গ টেনে বার বার আক্রমণ করে আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী সায়নীকে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও যাদবপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে ওই ‘কন্ডোম বিতর্ক’ই টেনে আনেন বিরোধীরা।