ভোট গণনার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্ট্রংরুমের বাইরে বহিরাগতদের উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা ছড়াল কোলাঘাটে।
বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং ওয়াকি-টকি নিয়ে ইভিএম লুট করতে এসেছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কোলাঘাট থানার পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। বিজেপির অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে পুলিশ। বিহিত চেয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের তমলুক জেলার সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় ইভিএম রয়েছে। কী ভাবে সেই ইভিএম লুট করা যাবে? কথাবার্তা বলার আগে বিজেপি ভাল করে ভেবে বলুক।’’
কোলাঘাট কেটিপিপি হাইস্কুলটি তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের স্ট্রংরুম। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন সিআইএসএফের জওয়ানেরা। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নির্দিষ্ট পাস নিয়ে দিনরাত স্ট্রংরুমের বাইরে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পাহারায় রয়েছেন। সেখানে জায়ান্ট স্ক্রিনে স্ট্রংরুমের ভিতরের ছবি সিসি ক্যামেরার লাইভ দেখানো হচ্ছে। এর বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা কেটিপিপি স্কুল চত্বরে দিনরাত নিজেদের মতো করে নজরদারি চালাচ্ছেন।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনটি গাড়ি এবং একটি মোটরবাইকে করে জনা কুড়ি অপরিচিত যুবক স্ট্রংরুমের ঠিক পিছনে মেশাড়া গ্রামে পৌঁছোয়। দু’জন যুবকের হাতে দু’টি ওয়াকিটকি ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের। কয়েক জন গ্রামবাসী ওই যুবকদের উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করলে তারা দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। এর পরোই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী ও স্থানীয় মহিলারা তাদের ঘেরাও করে ফেলেন। খবর পেয়ে আসেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
ঘটনাস্থল থেকে কোলাঘাট থানার দূরত্ব খুব বেশি নয়। পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনটি গাড়ি এবং মোটরবাইক চেপে চম্পট দেয় অভিযুক্তেরা। খবর পেয়ে তমলুকে নিজের অস্থায়ী বাসস্থান থেকে চলে আসেন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন অভিজিৎ। রাত ১২টা পর্যন্ত বাকবিতণ্ডা চলে। পুলিশের আশ্বাসে তার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বিজেপির দাবি, তৃণমূল ও আইপ্যাক দুষ্কৃতী দিয়ে ইভিএম লুট করতে এসেছিল। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা বামদেব গুছাইত বলেন, ‘‘দেবাংশু ভট্টাচার্য ২ লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজিত হবেন। তৃণমূল ও আইপ্যাক তাই দিশেহারা। আইপ্যাকের পরিকল্পনা মতো তৃণমূল দুষ্কৃতী পাঠিয়ে ইভিএম লুট করতে এসেছিল। মেশাড়া গ্রামের লোকজন এবং বিজেপির নেতা-কর্মীরা সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন। পুলিশ অভিযুক্তদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’’
যে গাড়িগুলি নিয়ে অভিযুক্তরা স্ট্রংরুম চত্বরে এসেছিল, সেই গাড়িগুলির নম্বর-সহ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি খবর পেয়ে রাত ৯টা নাগাদ আসি। শুনলাম, ওই যুবকদের কাছে অগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। ওরা এই জেলার কেউ নয়। ওই যুবকদের মধ্যে আইপ্যাকের ছেলেরাও ছিল। পুলিশকে বলেছি কড়া পাহারার ব্যবস্থা করতে। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে সমস্ত ঘটনা জানাব।’’
কোলাঘাট থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মেশাড়া গ্রামে কয়েক জন যুবক ওয়াকি-টকি হাতে নিয়ে একটি চায়ের দোকানে ঢোকে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ যাওয়ার আগেই অভিযুক্তরা চলে যায়। ঘটনার পর স্ট্রংরুম চত্বরে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।’’