এক পক্ষের লক্ষ্য বিধানসভায় ‘হারা’ ভাঙড়ে লোকসভায় জয়ধ্বজা ওড়ানো, আর অপর পক্ষের মরিয়া চেষ্টা গড় আগলে রাখার। লোকসভা ভোটের শেষ দফায় ‘কাঁটে কা টক্কর’ দেখলেন রাজ্যবাসী। সৌজন্যে, বহু রাজনৈতিক যুদ্ধের মাটি, ভাঙড়। রাজ্যে আইএসএফের হাতে থাকা একমাত্র বিধানসভা আসনটি এই ভাঙড়েই। আবার যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছ’টিতে এগিয়ে থাকলেও, তৃণমূলের একমাত্র কাঁটার নামও সেই ভাঙড়। সকাল থেকেই যাদবপুরের আইএসএফ প্রার্থী নুর আলম খানকে দেখা গেল ছুটতে। কখনও গ্রামবাসীদের ভোট দেওয়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য টোটো আনছেন, আবার কখনও পুলিশের গাড়ির সামনে চিৎকার করছেন ভোটারদের নিরাপত্তার দাবিতে, কখনও ভোটকেন্দ্রের সামনে জড়িয়ে পড়ছেন বচসায়। অন্য দিকে, নিজের ভোট দিয়ে যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ ঢুকে পড়েন ভাঙড়ের পার্টি অফিসে। বেলা গড়াতেও সেখান থেকে বেরোতে দেখা গেল না তাঁকে। কাঠফাটা রোদে যেখানে আইএসএফ প্রার্থী ঘুরলেন মাঠে-ময়দানে, সেখানে সায়নী বেছে নিলেন ভাঙড় ১ নম্বরে তৃণমূল পার্টি অফিসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। মোটামুটি দিনভর রইলেন সেখানেই। সেই পার্টি অফিসে বসে পরিচালনা করলেন ‘কুল কুল’ ভোট। যা দেখে অনেকেরই গুলিয়ে যাচ্ছিল, ভাঙড়ে এত নিশ্চিন্ত কী করে? পক্ষান্তরে, আইএসএফ প্রার্থীর হাঁকডাক শুনে মনে হতেই পারে, শক্ত ঘাঁটিতে কি খানিক হলেও ‘ব্যাকফুটে’ নওশাদেরা? ভোটের ভাঙড়ে আইএসএফকে মরিয়া হয়ে গড় আগলাতে দেখা গেলেও, দিনভর তেমন দেখাই মিলল না বিজেপি বা সিপিএমের। ভোট শেষে দেখা গেল, ভাঙড়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেবল ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল’ তৃণমূল এবং দিনভর দৌড়ে বেড়ানো আইএসএফ।
তবে, ভাঙড়ে ভোট হবে আর হিংসা হবে না, এমনও হয় নাকি? হয়ওনি তা। কেন্দ্রীয় বাহিনী, কুইক রেসপন্স টিম, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সাঁড়াশি নজরদারিকেও রীতিমতো ঘোল খাইয়ে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে ভাঙড়ে। সকালে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ঢোকার পর সায়নী আইএসএফের দিকে আক্রমণ শানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। বুঝতে পারছে, জিততে পারবে না। তাই ভোটদানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আইএসএফ আমাদের কর্মীদের মারছে। কিন্তু কর্মীদের পিটিয়ে মানুষকে ভোটদানে বিরত করা যাবে না। সেটা আইএসএফও বুঝতে পারছে। আমরা নিশ্চিত, বিপুল ব্যবধানে তা-ও জিতব। এই কারণেই আমি ভাঙড়কে বেস বানিয়েছি।’’ ভোটের আগের রাত থেকেই অশান্তি শুরু হয়ে গিয়েছিল ভাঙড়ে। শনিবার ভোট শুরু হতে না হতেই দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে। কোথাও আইএসএফ সমর্থকের মাথা ফাটল, কোথাও রক্ত ঝড়ল তৃণমূলের। কোথাও তৃণমূল কর্মীদের দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেল পুলিশ। কোথাও পুলিশ নিজেই আহত হয়ে হাসপাতালে। সব মিলিয়ে, সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচনের লোকসভা ভোট হোক বা তৃণমূল স্তরের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পঞ্চায়েত ভোট— ভোটের ভাঙড়ে কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ল না। নজরদারির লাল চোখকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাঙড় রয়ে গেল সেই ভাঙড়েই।