• দরপত্র বাতিল, প্রকল্প পিছোনোর শঙ্কা
    আনন্দবাজার | ০২ জুন ২০২৪
  • নির্বাচনী প্রচারে বারবার ঘুরে-ফিরে এসেছিল ডিভিসির রঘুনাথপুরের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, আরটিপিএসের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কথা। রাজ্যে এসে ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে সেই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পুরুলিয়ায় ভোট প্রচারে এসেও সেই প্রকল্পের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেই প্রকল্পেরই দরপত্র বাতিল হয়ে গেল। আরটিপিএসের প্রকল্প অধিকর্তা চৈতন্যপ্রকাশ বলেন,”আরটিপিএসের দ্বিতীয় পর্যায়ের দরপত্র আহ্বান করেছিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। একটি সংস্থা তাতে যোগ দেয়। সম্প্রতি সেই বিড বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।”

    ঘটনার খবর জানাজানি হতে কার্যত শোরগোল পড়েছে ডিভিসির অন্দরে। সংস্থা সূত্রে খবর, যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিল, তারা বেশ বেশি দর দিয়েছে। তাই তা বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যাবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

    ঘটনা হল, আরটিপিএসের দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে নানা টালবাহানা চলেছে। ২০১০ সালে কেন্দ্রের তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া রঘুনাথপুরে এসে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের শিলান্যাস করেছিলেন। কিন্তু সময়ের মধ্যে প্রথম পর্যায় থেকেই বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারেনি ডিভিসি। প্রথম পর্যায় থেকে কোনও লাভ না হওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায় তাই বাতিল করে দেয় কেন্দ্রের বিদ্যুৎ মন্ত্রক।

    পরবর্তীতে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প থেকে পূর্ণমাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় এবং লাভের মুখ দেখে ডিভিসি। মত বদল হয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকেরও। ফের রঘুনাথপুরে দ্বিতীয় পর্যায় শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মার্চে ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে প্রকল্পের শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রচারে জোর বাড়ায় বিজেপি। পুরুলিয়াতে প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন, ”রঘুনাথপুরের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাসের সুযোগ পেয়েছিলাম। ১১ হাজার কোটি টাকা এই প্রকল্পে অনেকের রোজগার তৈরি হবে। বাংলার বিকাশ হলে দেশও বিকশিত হবে।”

    স্থানীয় সূত্রের খবর, দ্বিতীয় পর্যায়ের ছোটখাটো নির্মাণকাজের বরাত পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল এলাকার ঠিকাদার সংস্থাগুলি। নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন স্থানীয়দের একাংশ। নির্মাণকাজে ঠিকাশ্রমিকের কাজ পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিল জমিহারা পরিবারগুলিও। তবে দরপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় হতাশা গোপন থাকছে না। অনেকেই জানান, নানা ভাবে রোজগারের সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। তা আপাতত স্থগিত হয়ে যাওয়ায় হতাশই লাগছে।

    ঘটনায় লেগেছে রাজনৈতিক রং-ও। তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ”নির্বাচনের মুখে তড়িঘড়ি প্রধানমন্ত্রী রঘুনাথপুরে ডিভিসির আরটিপিএসের প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের শিলান্যাস করেন। কিন্তু কাজের দরপত্রই বাতিল হয়ে গিয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, এটি ছিল বিজেপির নির্বাচনী টোপ মাত্র। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে তারা।”

    বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী তবে বলেন, ‘‘কোনও কারণে দরপত্র বাতিল হয়েছে। প্রকল্প তো বাতিল হয়নি। ডিভিসি দেশের সাধারণ মানুষের করের টাকা সাশ্রয় করতেই বেশি দরে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ করতে আগ্রহী হয়নি। ফের দরপত্র ডেকে ঠিকঠাক দরে আরটিপিএসের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ দ্রুত শুরু হবে। কর্মসংস্থান থেকে স্থানীয়দের রোজগার, সবটাই হবে। তৃণমূল অহেতুক ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগাচ্ছে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)