পেটের দায়ে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার আগেই খাতড়ার এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হল। শনিবার সকালে সঙ্গীরা ওই পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, মৃতের নাম গোষ্ঠ সাইনি (৩২)। তাঁর বাড়ি খাতড়া শহরের হাড়িপাড়ায়।
এসডিপিও (খাতড়া) অভিষেক যাদব বলেন, ‘‘এক শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’’ তবে লোকসভা ভোটের আবহে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাবের অভিযোগকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।
পরিবারের দাবি, এলাকায় তেমন কাজের সুযোগ নেই। তাই বাড়িতে বৃদ্ধা মা ও দাদাকে রেখে রোজগারের আশায় গত সোমবার (২৭ মে) এলাকার চার যুবকের সঙ্গে গোষ্ঠ ছত্তীসগঢ়ে ঠিকা শ্রমিকের কাজে যোগ দিতে রওনা দেন। ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুরের তিলদা এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে গিয়েছিলেন।
মৃতের খুড়তুতো ভাই রোহিত সাইনি বলেন, ‘‘সেখানে পৌঁছে তখনও কাজে যোগ দেয়নি। দাদার সঙ্গীদের কাছ থেকে জেনেছি, বুধবার বিকাল নাগাদ কিছু কিনতে সে বেরিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে না আসায় সঙ্গীরা খোঁজখবর নিতে শুরু করে। আমাদেরও জানায়। রাতে খাতড়া থানাতেও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পুলিশ কিছু বলতে পারেনি। পরের দিন সকালে খবর পাই, রাস্তার পাশ থেকে গোষ্ঠর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। যদিও তার দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।’’
তিনি জানান, সেখানে দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়। শনিবার সকালে সঙ্গীরা মৃতদেহ বাড়িতে আনেন। কী ভাবে এই মৃত্যু ঘটল, তা নিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন মৃতের পরিজনেরা। সেই সঙ্গে সরকারি ক্ষতিপূরণের দাবি করেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ বাঁকুড়ার খাতড়া, রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা, সিমলাপাল-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে হায়দরাবাদ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কাজে যান। এক পরিযায়ী শ্রমিকের বৃদ্ধা মা বলেন, ‘‘এলাকায় কাজ না থাকায় গ্রাম ছেড়ে স্ত্রী, সন্তান, পরিবার ছেড়ে হায়দরাবাদে ছেলে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে। ভোটে পাঁচ-সাত দিনের জন্য বাড়ি ফিরেছিল। ভোটের দু’দিন পরেই ফিরে গিয়েছে। বাইরে কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের মৃত্যুর ঘটনা শুনলে খুব ভয় হয়।’’
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্যে কর্মসংস্থানের উপায় নেই। তাই হাজার হাজার বেকার যুবককে ঘর-সংসার ছেড়ে ভিন্ রাজ্যে পেটের দায়ে যেতে হচ্ছে। এই পরিণতির দায় রাজ্য সরকারের।’’ রানিবাঁধের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডির দাবি, ‘‘রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে কি না সেটা সাধারণ মানুষ ভাল ভাবেই জানেন। শুধু মিথ্যাচার করতে বিজেপি মানুষের মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।’’
মৃত যুবকের মা বৃদ্ধা সুমিত্রা সাইনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ছেলে বাড়ি থেকে গিয়েছিল। হঠাৎ কী এমন হল, যে ছেলেটা চলে গেল। গোষ্ঠই ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগারে। এই অবস্থায় সরকারি ক্ষতিপূরণ ছাড়া আমাদের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব।’’ বিডিও (খাতড়া) দেবজিৎ রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’