রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) ২০২৪ অর্থবর্ষে ব্রিটেন থেকে প্রায় ১০০ টন সোনা ফিরিয়ে এনেছে। গোল্ড রিজার্ভে সেই সোনা রাখছে RBI। বিদেশি মুদ্রার সংকট মোকাবিলা করার জন্য, RBI ১৯৯১ সালে ব্রিটেনের কাছে এই সোনা বন্ধক রেখেছিল। এই প্রথম RBI বিদেশ থেকে এত বিপুল পরিমাণ সোনা তার রিজার্ভে স্থানান্তর করেছে। বিজনেস টুডে-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী মাসে এই একই পরিমাণ সোনা আবার দেশে আনা হতে পারে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অর্ধেকেরও বেশি সোনার ভাণ্ডার বিদেশে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড এবং ব্যাঙ্ক অফ ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের কাছে রাখা আছে। তবে এর এক তৃতীয়াংশ ভারতে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই যে ১০০ টন সোনা ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, এতে ভারতের কী লাভ হবে?
আরবিআই-এর কাছে কত সোনা আছে?
২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার হাতে থাকা মোট সোনার পরিমাণ ৮২২.১০ টন। এর একটি বড় অংশ বিদেশে রাখা আছে। ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড থেকে সম্প্রতি ১০০ টন সোনা ফেরত এনেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ভারতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে থাকা মোট সোনার পরিমাণ ৪০৮ টন।
আরবিআইয়ের প্রচুর সোনা বিদেশে রাখা থাকে
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ৩০৮ টনেরও বেশি সোনা রাখা হয়েছে। আরও ১০০.২৮ টন সোনা আছে। মোট সোনার রিজার্ভের মধ্যে ৪১৩.৭৯ টন বিদেশে মজুত রয়েছে।
কেন আরবিআই নিজেদের সোনা বিদেশে রাখে?
১৯৯০-৯১ সালের বিদেশি মুদ্রা সংকটের সময়, ভারত তার সোনার রিজার্ভের একটি অংশ ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের কাছে রেখে $৪০৫ মিলিয়ন ধার নিয়েছিল। ১৯৯১ সালের নভেম্বরের মধ্যেই সেই ঋণের টাকা শোধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লজিস্টিক কারণে আরবিআই সোনা ব্রিটেনেই রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বিদেশে রাখা সোনা ব্যবসা, লেনদেন এবং রিটার্নের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আরবিআই আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও সোনা কেনে।
এখন তাহলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে কেন?
গত কয়েক বছরে কিছু দেশের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় বিদেশে বিপুল পরিমাণে সোনা রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এত সোনা দিয়ে আরবিআই কী করবে?
দেশের বাজারে সোনার দাম কমাতে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে আরবিআই স্থানীয়ভাবে রাখা সোনা ব্যবহার করতে পারে। বিশেষত গোল্ড এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডের মতো বিনিয়োগের উচ্চ চাহিদা রয়েছে। এমন সময়, আরবিআই এমন পদক্ষেপ নিতেই পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সেটা করলে সত্যিই উল্লেখযোগ্য বিষয় হবে। তবে এই নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি RBI।
সোনা ভারতে থাকলে সোনা রাখার জন্য অন্য কোনও দেশকে বাড়তি চার্জ দিতে হবে না। যদি কখনও নগদ টাকার সমস্যা বা আর্থিক সংকট দেখা দেয়, তবে এই সোনা ব্যবহার করে আর্থিক সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
RBI প্রচুর সোনা কিনেছে
উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, ইদানিং RBI প্রচুর সোনা কিনছে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসেই আরবিআই আগের বছর কেনা মোট সোনার প্রায় দেড়গুণ কিনেছে। ডলারের দরপতনের কারণেই সোনাতে ভরসা করা হচ্ছে, মত বিশেষজ্ঞদের।
সাধারণত ডলারের দরপতন, বাজার অস্থিরতার ক্ষেত্রে সোনার মতো বিনিয়োগের দিকেই ঝোঁকেন বিশ্বের তাবড় বিনিয়োগকারীরা।