• বুথফেরত সমীক্ষা কী? কী ভাবে গণনার আগেই হিসাব করা হয় ভোটের ফল? এর গুরুত্বই বা কতটা?
    আনন্দবাজার | ০২ জুন ২০২৪
  • ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। এ বার ভোটগণনার পালা। তার পরেই কেন্দ্রের কুর্সিতে বসবে নতুন সরকার। নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন, না কি কেন্দ্রে সরকার গড়বে বিরোধী জোট, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

    সাতটি দফায় প্রায় তিন মাস ধরে লোকসভা নির্বাচন চলেছে দেশে। আগামী ৪ জুন ভোটের ফল জানা যাবে। ওই দিন সকাল থেকে শুরু হবে ইভিএমের গণনা। আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে আছে গোটা দেশ।

    যে কোনও নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে বুথফেরত সমীক্ষা। নির্বাচন কমিশনের ফল ঘোষণার আগে সকলে এই সমীক্ষাগুলির দিকে চেয়ে থাকে। ভোটের পরে তা নিয়ে চলে বিস্তর চর্চা।

    কিন্তু বুথফেরত সমীক্ষা কী? কেন এই সমীক্ষা করা হয়? কেনই বা তা নিয়ে এত মাতামাতি রাজনৈতিক মহলে? ভোটগ্রহণ পর্ব শেষের পর এই ধরনের সমীক্ষা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

    বিভিন্ন কেন্দ্রে মানুষের ভোট দেওয়া হয়ে গেলে ভোটারদের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই কোথায় কোন দল কতগুলি আসন পাবে, তার ভবিষ্যদ্বাণী করে বুথফেরত সমীক্ষা।

    সাধারণত, কয়েকটি নির্বাচনী সংস্থা এই ধরনের সমীক্ষার আয়োজন করে থাকে। ভোটারদের ‘মনের কথা’ জানতে তারা ব্যবহার করে বেশ কিছু কৌশল। তার মাধ্যমেই তৈরি করা হয় নির্বাচনের সম্ভাব্য ফল।

    বুথফেরত সমীক্ষা তৈরি করার জন্য ভোটের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘোরেন সমীক্ষকেরা। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন। বোঝার চেষ্টা করেন এলাকার রাজনৈতিক ‘হাওয়া’। কোন রাজ্যে কোন দল কতগুলি আসন পেতে পারে, তার নকশা তৈরি করা হয়।

    সমীক্ষার জন্য প্রথমে বিভিন্ন কেন্দ্রের কয়েকটি বুথ বাছা হয়। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন সমীক্ষকেরা। ভোট দিয়ে ভোটাররা বেরোলে তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করা হয়। সেই উত্তরের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় সমীক্ষার ফল।

    অনেক ক্ষেত্রে ভোট দিয়ে বেরোনোর পর ভোটারদের সামনে ধরা হয় নমুনা ইভিএম। সেখানে গোপনে তাঁরা আবার ‘ভোট’ দেন। সমীক্ষার ফল নির্ভর করে ওই নকল ভোটের উপরেও।

    তবে এই বুথফেরত সমীক্ষার উপর কোনও ভাবেই কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করে না। সমীক্ষার ফলের সঙ্গে আসল ফল না-ও মিলতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই সেই নজির রয়েছে। দেখা গিয়েছে, বুথফেরত সমীক্ষার ফল একেবারে উল্টে গিয়েছে ভোটগণনার দিন।

    বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। সকল দফার ভোটগ্রহণ পর্ব একেবারে শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারে সংস্থাগুলি।

    কোনও ভাবেই ভোট শেষ হওয়ার আগে সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা যায় না। তাতে ওই ফল দেখে ভোটারদের প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তা এড়াতেই বুথফেরত সমীক্ষায় বেশ কিছু বিধি বেঁধে দেয় কমিশন।

    বুথফেরত সমীক্ষার ফল না মেলার সম্ভাবনা থাকলেও এই সমীক্ষার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। ভোটের পর কোন রাজ্যে কোন দল কত আসন পেতে চলেছে, সকলের মনেই সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। সমীক্ষার ফলে কিছুটা হলেও ফলের আভাস পাওয়া যায়।

    সংবাদমাধ্যমগুলি বরাবরই বুথফেরত সমীক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সম্প্রচার করে থাকে। শনিবার সন্ধ্যায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।

    দেশে জনপ্রিয় কিছু বুথফেরত সমীক্ষা হল এবিপি নিউজ়-সি ভোটার সমীক্ষা, ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া সমীক্ষা, নিউজ় ২৪- টুডেজ় চাণক্যের বুথফেরত সমীক্ষা। প্রতি ক্ষেত্রেই ইঙ্গিত, কেন্দ্রের কুর্সিতে তৃতীয় বারের জন্য বসতে চলেছেন মোদী।

    বাংলার ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে বুথফেরত সমীক্ষাগুলি। প্রায় প্রতিটিতেই আভাস, বাংলায় তৃণমূলকে ছাপিয়ে যাবে বিজেপি। বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে একটি থেকে তিনটি আসন।

    ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত সব সময় মেলে না। বুথফেরত সমীক্ষা একেবারে ভুল প্রমাণিত হওয়ার উদাহরণও অসংখ্য। বুথফেরত সমীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তবে বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস মিলে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। শনিবার সমীক্ষার যে ফল প্রকাশিত হল, তা বাস্তবের সঙ্গে কতটা মেলে, সেটাই এখন দেখার।
    ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত সব সময় মেলে না। বুথফেরত সমীক্ষা একেবারে ভুল প্রমাণিত হওয়ার উদাহরণও অসংখ্য। বুথফেরত সমীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তবে বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস মিলে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। শনিবার সমীক্ষার যে ফল প্রকাশিত হল, তা বাস্তবের সঙ্গে কতটা মেলে, সেটাই এখন দেখার।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)