একদা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরাধীন অনেক দেশকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এখন ভারতের প্রশাসনিক মডেল বিশ্বের অনেক দেশের কাছে মডেল হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মতে, করোনার কঠিন সময়ে ভারতের সফল প্রচেষ্টার ফলে সব দেশ সাহস পেয়েছে। তারা ভারতের সহযোগিতাও পেয়েছে। কন্যাকুমারীতে ধ্যানের পরে দিল্লিতে ফেরার পথে বিমানে বসে দেশবাসীর উদ্দেশে লেখা এক বার্তায় এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
বার্তায় মোদী জানিয়েছেন, ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে টেনে তুলেছে তাঁর সরকার। জনভিত্তিক সুশাসনের মতো অভিনব পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে গোটা বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে। মোদীর কথায়, ‘‘গরিবের ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে সমাজের প্রান্তিকতম মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার অগ্রাধিকার ও আমাদের প্রচেষ্টা আজ গোটা বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।’’ তাঁর মতে, ভারতের উন্নয়ন ও উত্থান গোটা বিশ্বে ভারতের সহযাত্রী সব দেশের পক্ষেই ঐতিহাসিক সুযোগ। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের পর থেকেই ভারতের ভূমিকাকে বিশ্ববাসী আরও বেশি স্বীকার করছেন। এখন ভারত ‘গ্লোবাল সাউথ’ গোষ্ঠীর এক গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর হিসেবে স্বীকৃত। দিল্লির চেষ্টার ফলেই আফ্রিকান ইউনিয়ন জি২০ গোষ্ঠীর অংশ হয়েছে। তা সব আফ্রিকান দেশের জন্যই ভবিষ্যতের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ অভিযানের কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর দাবি, তাঁর সরকার যে ভাবে প্রযুক্তিকে গরিবদের ক্ষমতায়নে ব্যবহার করেছে ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় যে ভাবে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে যে ভাবে গরিবের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে তা আজ গোটা বিশ্বের কাছে এক উদাহরণ। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতে সস্তায় ডেটা গরিব মানুষের কাছে তথ্য পরিবেশন ও অন্যান্য পরিষেবা পৌঁছে দেয়। ফলে সেটি এখন সামাজিক সাম্যের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।’’ তাঁর দাবি, গোটা বিশ্ব প্রযুক্তির এই গণতন্ত্রীকরণকে খতিয়ে দেখছে। বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা অনেক দেশকেই ভারতের মডেল থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ভারতের এই রূপ যেমন গর্বের বিষয় তেমনই ভারতবাসীকে তাঁদের কর্তব্যগুলিও মনে রাখতে হবে। দেশের উন্নয়নকে যাচাই করতে হবে আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে। বুঝতে হবে ভারতের নিজস্ব শক্তিকে।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, কোনও দেশের সংস্কার স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া হতে পারে না। সে জন্য ভারতে ‘রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম’ (সংস্কার, বাস্তবায়ন ও রূপান্তরণ)-এর কর্মসূচি নিয়ে চলছে তাঁর সরকার। সংস্কারের দায়িত্ব নেতৃত্বকেই নিতে হয়। আমলাতন্ত্র তা বাস্তবায়িত করে। জনগণ এর সঙ্গে যুক্ত হলে রূপান্তরণ ঘটে। মোদীর মতে, উন্নত ভারত গড়ার জন্য প্রয়োজন চারটি লক্ষ্য। গতি, মাপ, পরিসর ও মান বজায় রেখে দ্রুত গতিতে কাজ করতে হবে। উৎপাদনের পাশাপাশি জোর দিতে হবে উৎকর্ষেও। কাজ করতে হবে ‘জ়িরো ডিফেক্ট, জ়িরো এফেক্ট’ মন্ত্র নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর মতে, দেশে পুরনো চিন্তাভাবনা ও কুসংস্কারের পরিমার্জন প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সমাজকে মুক্ত করতে হবে ‘পেশাদার নিরাশাবাদী’দের হাত থেকে। কারণ, নেতিবাচকতা থেকে মুক্তিই সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর প্রথম ধাপ।