কর্মরত সব স্কুল শিক্ষককে তাঁদের নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে জমা দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সেই নথির খুঁটিনাটি তথ্য তাঁদের তুলতে হবে স্কুলের পোর্টালেও। সম্প্রতি জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-দের দেওয়া এই নির্দেশ ঘিরে শিক্ষক মহলে জমেছে অসন্তোষের মেঘ। তাঁদের অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে, অর্থাৎ ১৯৯৮-এর আগের নিয়োগ-নথির অনেক তথ্যই স্কুলগুলিতে এখন অমিল। ফলে নথি জমা দেওয়ার প্রশ্নে অসঙ্গতি থেকে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। যার সূত্র ধরে নিয়োগেও কোনও বেনিয়ম হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাবে।
১৯৯৮-এর আগে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হত মূলত ‘এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ’-এ তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের যোগ্যতা এবং তার পরে স্কুলের পরিচালন সমিতির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। সাক্ষাৎকারের পরে প্যানেল তৈরি করে তা ডিআই-দের কাছে পাঠানোই ছিল রীতি। পরিদর্শক সেই প্যানেল অনুমোদন করলে তালিকা অনুযায়ী প্রার্থীদের ঠিকানায় যেত নিয়োগপত্র। সূত্রের দাবি, ডিআই-দের সেই অনুমোদন করা প্যানেল অনেক ক্ষেত্রেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি পরিদর্শকের চিঠিতে পাওয়া যাচ্ছে না মেমো নম্বরও।
বাঙুরের নারায়ণ দাস মেমোরিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “আমাদের স্কুলে পরিদর্শকের অনুমোদন করা এমন চিঠি পাওয়া গিয়েছে, যার মেমো নম্বর নেই। সে ক্ষেত্রে আমরা যখন ওই শিক্ষকের নিয়োগের নথি জেলা স্কুল পরিদর্শককে পাঠাচ্ছি বা অনলাইনে আপলোড করছি সেখানে লিখতে হচ্ছে মেমো নম্বর নেই।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুলের শিক্ষক জানান, তাঁদের স্কুলে পরিদর্শকের অনুমোদন করা প্যানেলই পাওয়া যাচ্ছে না।
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, “১৯৯৮-এর আগের নথি পাওয়া অধিকাংশ স্কুলের ক্ষেত্রেই সমস্যা।” অন্য দিকে, কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ১৯৯৮-এর আগে কোনও লিখিত পরীক্ষা ছিল না। শুধুই প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হত। সে ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকারে স্বজনপোষণের সুযোগ ছিল যথেষ্ট।
এক জেলা স্কুল পরিদর্শকের কথায়, “কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আমরা নথি জমা দিতে বলেছি। এখন যত স্কুল শিক্ষক চাকরি করছেন, তাঁদের সবার নিয়োগের নথি ডিজিটালাইজ়ড করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতেই প্রধান শিক্ষকদের ওই তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।”