হাতে ছিল ৭৫ দিন। তাতে হয়েছে ৯৫,৫৪৩টি প্রচার কর্মসূচি। অর্থাৎ দৈনিক কর্মসূচির সংখ্যা প্রায় ১২৭৪টি করে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটগ্রহণ পর্বে চুম্বকে পশ্চিমবঙ্গে এটাই মূল রাজনৈতিক দলগুলির ‘পরিশ্রম’-এর পরিসংখ্যান।
বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিতকে মানতে রাজি নন তৃণমূল নেতৃত্ব। কংগ্রেস নেতৃত্বের অবস্থানও কার্যত এক। বরং তাঁদের দাবি, ভোটগ্রহণ পর্বের টানা ৭৭ দিন ধরে এই কঠোর পরিশ্রম ব্যর্থ হতেই পারে না। তাই সেই সব শিবির থেকে উঠে আসছে বুথফেরত সমীক্ষাকে ঘিরে ‘ফেক-তত্ত্ব’-এর যুক্তি। কার পরিশ্রম কত ‘মিষ্টি’ ফল দেবে তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হলেও, এ রাজ্যের মাঠে-ঘাটে সবচেয়ে বেশি প্রচার কর্মসূচির পরিশ্রমে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূলই। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিজেপি। তৃতীয় এবং চতুর্থ যথাক্রমে সিপিএম এবং কংগ্রেস।
ভোট ঘোষণা হয়েছিল ১৬ মার্চ। তার পর থেকেই প্রচার শুরু হয় জেলায় জেলায়। সপ্তম তথা শেষ দফার ভোট হয়েছে ১ জুন। শেষ দফার প্রচার শেষ হয়েছে ৩০ মে। ফলে ১৭ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ৭৫ দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন ডান-বাম সব পক্ষের বহু নেতা-নেত্রী।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, ওই সময়সীমায় প্রচার কর্মসূচির জন্য নির্দল-সহ ন’টি রাজনৈতিক দল মিলিয়ে এক লক্ষ ১৯ হাজার ২৮৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে ৯৫ হাজার ৫৪৩টি কর্মসূচির অনুমতি দিয়েছিল কমিশন। সেই দিক থেকে ওই ৭৫ দিন ধরে দৈনিক প্রায় ১২৭৪টি করে কর্মসূচি হয়েছে রাজ্য জুড়ে।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কার্যালয় জানাচ্ছে, রাজ্যে মূল রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তৃণমূল একাই করেছে ৪৫ হাজার ৮৬০টি প্রচার কর্মসূচি। দৈনিক হিসেবে তা গড়ে ৬১১টি। বিজেপি করেছে মোট ২১ হাজার ৬২৯টি কর্মসূচি। দৈনিক সেই সংখ্যা গড়ে ২৮৮টি। সিপিএম করেছে ১৭ হাজার চারটি কর্মসূচি (দৈনিক হিসাবে গড়ে ২২৭টি) এবং কংগ্রেসের কর্মসূচির সংখ্যা ১৬৯৭টি (গড়ে দৈনিক ২৩টি করে)।
আবার প্রচারের কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহারেও এগিয়ে থেকেছে তৃণমূলই। ভোটগ্রহণ পর্বে রাজ্যের শাসকদলের ৫২৩টি সংশ্লিষ্ট আবেদন মঞ্জুর করেছে কমিশন। বিজেপির ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা ১২৪। কংগ্রেস দু’বার হেলিকপ্টার ব্যবহারের আর্জি জানিয়েছিল। সিপিএমের এমন কোনও আবেদন জমা পড়েনি কমিশনের কাছে।
তবে কমিশনের তথ্য বলছে, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি মেলালে (মালদহ পর্যন্ত) প্রচার কর্মসূচির হার তুলনায় বেশ কম। সেখানে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ প্রচার কর্মসূচি (মোটের প্রায় ১৫%) হয়েছে তিন দফা মিলিয়ে। দক্ষিণবঙ্গে সেই হার প্রায় ৮৫%। অবশ্য বাতিলও হয়েছে বহু প্রচার-কর্মসূচির আবেদন। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সব দলগুলি মিলিয়ে ২০ হাজার ৭৯৮টি আবেদনই বাতিল করা হয়েছিল। তার শীর্ষেও রয়েছে তৃণমূল (৭০২০টি)। বিজেপির ক্ষেত্রে তা ৬০০৬। সিপিএম ও কংগ্রেসের সেই সংখ্যা যথাক্রমে ৩৮৪৩ এবং ৩৫৬।