রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: তরুণ ব্রিগেডের হাত ধরে উড়বে কি লাল আবীর! কাটবে শূন্যের গেরো? রেজাল্ট বেরনোর আগে অঙ্ক কষছে আলিমুদ্দিন। প্রায় দুমাস পরীক্ষার পর কাল ফলপ্রকাশ। মাঠেঘাটে লড়াই দেওয়ার চেষ্টা করেছে লাল পতাকা। দলের তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে ভোট বাক্সে সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে কোনও চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি আলিমুদ্দিন। আবার জোট করতে হয়েছে কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গেও। সিপিএম তথা বাম নেতাদের একটাই লক্ষ্য ভোট বাড়িয়ে শূন্যের গেরো কাটানো। রামে যাওয়া ভোট বামে ফিরছে সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী সিপিএম নেতারা। কিন্তু সেই ফিরে আসা ভোট কথিত, লোকসভার একটাও আসন কি ঝুলিতে আসবে। শেষ মুহূর্তে অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত আলিমুদ্দিন। তাছাড়া, শনিবার বিভিন্ন সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষা খুব একটা আশার আলো দেখাচ্ছে না বামেদের।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, এবার লোকসভা ভোটে বিভিন্ন আসনে বামেরা তাদের উপস্থিতি জানান দিতে পেরেছে। প্রার্থী করা থেকে শুরু করে মিছিলে সভায় তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি ও তরুণ ব্রিগেডকে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা এবার কিছুটা হলেও অক্সিজেন দিয়েছে বাম শিবিরকে। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা পিছনে থেকে সামনে এগিয়ে দিয়েছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্য, কলতান দাশগুপ্ত, প্রতীক-উর-রহমান, দীপ্সিতা ধরদের। আবার প্রচারে সামনের সারিতে ছিলেন প্রাক্তন যুবনেতা কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়, সায়নদীপ মিত্ররাও। গোটা রাজ্যজুড়ে প্রচার করেছেন পার্টির অন্যতম প্রধান মুখ মীনাক্ষী। আর এই তরুণ ব্রিগেডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। সেলিম মুর্শিদাবাদে আর সুজন দমদমে প্রার্থীও হয়েছিলেন। সংগঠনে ও ভোটের রাজনীতিতে তরুণ ব্রিগেডের উপরই আস্থা রেখে এগিয়েছে সিপিএম। ভোটের আগে ইনসাফ যাত্রা, তারপর ব্রিগেড সমাবেশে সামনে ছিল পার্টির একঝাঁক তরুণ মুখ। এবারের লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha 2024) বামেদের অস্তিত্ব রক্ষার চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে পার্টির পুরনো কর্মী-সমর্থকরা। তারাও এবার অনেকেই সক্রিয়ভাবে ফিরে এসেছে বলে দাবি করেছেন সুজন চক্রবর্তী। জেলা কমিটির এক নেতার কথায়, “বামেদের পালে হাওয়া লাগলে ভয় যে বিজেপিরই। বামেদের পাওয়া ভোটেই তারা বেড়েছে। এবার কিন্তু ওদের ভোট কমবে।? আর গতকাল শেষ দফার ভোটের দিনও কলকাতা ও শহরতলি ও দুই চব্বিশ পরগনায় মাঠে লড়াই দিতে দেখা গিয়েছে সিপিএমকে (CPIM)। লাল ঝান্ডা ছিল দৃশ্যমান। আর তাই বিজেপিতে যাওয়া ভোট যে ফিরছে সে বিষয়ে নিশ্চিত সিপিএম। দলের অভ্যন্তরীণ বুথ ফেরত সমীক্ষা রিপোর্টে সেই আভাস মিলেছে বলে দাবি সিপিএম নেতাদের।
রাজ্য থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময় এগারো সালে সিপিএমের ভোট ছিল ৩০.৭ শতাংশের ঘরে। তৃণমূল পেয়েছিল ৩৯ শতাংশ। বামেদের ৪০ জন বিধায়ক ছিল। সেই সময় ধারেকাছেও ছিল না বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বামেদের প্রাপ্ত ভোট কমে চলে আসে ২৯ শতাংশে। এরপরই শুরু হয় রক্তক্ষরণ। অন্যদিকে বামেদের ভোট বাক্সে থাবা বসিয়ে বিজেপির উত্থান শুরু হয়। ২০১৬-র বিধানসভায় তৃণমূল পায় ৪৫ শতাংশ ভোট, বিজেপি ১০ শতাংশ ভোট পায়। বামফ্রন্টের ভোট আরও কমে হয় ২৬.১ শতাংশ। কংগ্রেস পায় ১২.৩ শতাংশ। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৪৩.৭ শতাংশ। বিজেপি পায় ৪০.৬ শতাংশ। সেখানে সিপিএমের (CPIM) প্রাপ্ত ভোট নেমে আসে ৬.৩ শতাংশে। আর কংগ্রেস পেয়েছিল ৫.৭ শতাংশ। আর গত একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ভোট বেড়ে হয় ৪৭.৯৪, বিজেপি ৩৮.১৩ শতাংশ পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে পরিষদীয় রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী হয়ে ওঠে। সিপিএমের ভোট কমে ৪.৭২ শতাংশে নেমে যায়। কংগ্রেস পায় মাত্র ২.৯৪ শতাংশ ভোট।
এবার কমপক্ষে ১৫ শতাংশ ভোট বামেদের ঝুলিতে আসতে পারে বলে মনে করছে দলের একাংশ। কারণ, বামেদের ভোটের প্রচারে মিটিং-মিছিলে ভালো লোক হয়েছে। অল্প বয়সী বেশ কয়েকজন প্রার্থী ভালো সাড়াও পেয়েছেন। পাশাপাশি পার্টির অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট, সংখ্যালঘুদের একটা অংশের ভোটও আসবে বামেদের ঝুলিতে। আলিমুদ্দিনের আশা, ভোট কাটাকুটির খেলায় কয়েকটি আসন যদি চলে আসে তাহলে অন্তত রাজ্য রাজনীতিতে ‘শূন্য’র বদনাম ঘুচবে। তাই ফল প্রকাশের আগে শেষ মুহূর্তে হিসেবনিকেশে ব্যস্ত আলিমুদ্দিন ভোট ম্যানেজাররা থেকে শুরু করে জেলার নেতারা।