নব্যেন্দু হাজরা: যাত্রী নিরাপত্তায় সমস্ত যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক গাড়িতে ভেহিক্যাল লোকেশান ট্র্যাকিং ডিভাইস (ভিএলটিডি) বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি লেগেছে প্যানিক বোতামও। যাতে কোনও যাত্রী বিপদে পড়ে ওই বোতাম প্রেস করলে সেই খবর সরাসরি পৌঁছে যায় পরিবহণ দপ্তরের কন্ট্রোল রুমে। সেখান থেকে লালবাজারে। আর খবর পেতেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ। কিন্তু এই প্যানিক বোতাম লাগিয়ে বেধেছে নয়া বিপত্তি। প্যানিক বোতামের প্যানিকে জেরবার পরিবহণ দপ্তরের কন্ট্রোল রুম।
কোনও কারণ ছাড়াই যে কেউ যখন তখন এই বোতামে চাপ দিচ্ছেন। যার সংকেত ভেসে উঠছে কন্ট্রোল রুমে। অথচ তারা বুঝতে পারছেন না আদৌ সেই গাড়িতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেছে কিনা! কারণ পরিবহণ দপ্তর এবং পুলিশের অধিকারিকরা একাধিকবার গাড়ি ট্র্যাক করে দেখেছেন, যেখান থেকে এই প্যানিক বোতাম টেপা হয়েছে, সেখানে আদৌ কিছু হয়নি। কৌতুহলবসত কেউ এই বোতাম প্রেস করেছেন। ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে পুলিশকে। এই দলে যেমন বাসের যাত্রী রয়েছেন, তেমনই স্কুলের পড়ুয়ারাও রয়েছেন। পাশাপাশি বিষয়টিতে গাড়ির মালিকরাও যুক্ত বলে খবর পেয়েছে পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা।
এক আধিকারিকের কথায়, ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করছে একশ্রেণির মালিক। তাঁরা ভাবছে, বার বার এই বোতাম টিপে যদি কন্ট্রোল রুমকে ব্যস্ত করা হয়, একসময় হয়তো বিরক্ত হয়ে প্যানিক বোতাম তুলে দেবে পরিবহণ দপ্তর। কিন্তু সেটা তো হবেই না। উলটে বার বার একই গাড়ি থেকে যদি এই প্যানিক বোতাম টেপার সংকেত পায় কন্ট্রোল রুম এবং গিয়ে দেখে কোনও কারণ ছাড়াই ওই বোতাম টেপা হয়েছে, তাহলে সেই গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি ভিএলটিডি নিয়ে একটি বৈঠক করেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন। সেখানে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্যের ১ লক্ষ ২৮ হাজার বাণিজ্যিক গাড়িতে এই যন্ত্র বসানো হয়ে গিয়েছে। ভিএলটিএস বসালে কন্ট্রোল রুম থেকে গাড়ির গতিবিধি ট্র্যাক করা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী বাস, স্কুলবাস, পুলকার সব গাড়িতেই দুমিটার অন্তর একটি করে বোতাম লাগাতে হয়েছে। বাসে দুটি সিট অন্তর লাগানো হচ্ছে। মানে টাটা সুমোয় চারটি, বাসে সিট ক্যাপাসিটি অনুযায়ী কোনওটা ৭টা কোনওটায় ৯টি, বড় বাসে আবার তার থেকেও বেশি। পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, প্রথম দিকে এই যন্ত্রের দাম একটু বেশিই ছিল। ফলে গাড়ির মালিকরা তা লাগাচ্ছিলেন না। কিন্তু সরকারের হস্তক্ষেপে দাম প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এখন বাস-স্কুলবাস সহ সমস্ত যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক গাড়িতেই এই যন্ত্র বসেছে। পাশাপাশি লাগছে প্যানিক বোতামও। এই যন্ত্র বসলে সমস্ত গাড়িকেই ট্র্যাক করতে পারা যাবে কন্ট্রোলরুম থেকে।
পুলকার ওনার্স ওয়েলফেরায় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দত্ত বলেন, ?আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্কুলের সামনে ক্যাম্প করেছি। সেখানে ভিএলটিএস যন্ত্র এবং প্যানিক বোতাম নিয়ে প্রচারও চালানো হয়েছে। সচেতনতা শিবির আগামী দিনেও হবে। স্কুলের বাচ্চারা হয়তো কেউ কেউ নতুন জিনিস দেখে হাত লাগিয়ে দিতে পারে। তবে আশা করি, ওদের বোঝানো হলে ঠিক করে তা আর করবে না।?