• ৭ বাঙালির ফুটবল প্রেমে মুখরিত কাতারের আকাশ ভাত-ডিম সেদ্ধ দিয়ে লাঞ্চ সেরেই খেলা দেখতে মাঠে ছুট
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কাতারে পৌঁছে প্রথম দিন অ্যাপ থেকে খাবার অর্ডার করে বিস্তর পস্তাতে হয়েছে। সে খাবার মুখে তোলা প্রায় সম্ভব হয়নি। এরপর আর কোনও ঝুঁকি নয়, কাছের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে চাল, আলু, ডিম, চা আর সব্জি কিনে নিয়ে আসেন। তা দিয়ে নিজেরাই হাঁড়ি চড়ান। তারপর পেট পুরে খেয়ে মাঠের দিকে ছুট। কোরক বসু নীল রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা ধুতি পরে বসলেন গিয়ে স্টেডিয়ামে।  কোরকবাবুর বন্ধু শান্তনু সরকার, সুনন্দ চৌধুরী ও অতনু কুণ্ডু অবশ্য নীল-সাদা জার্সিতে সেজেছিলেন। স্টেডিয়ামে ও দেশের জনাকয়েক বাঙালির সঙ্গে দেখা। কোরককে পুরোদস্তুর বাঙালি পোশাকে দেখে তাঁরা বেজায় অবাক। অচেনা মানুষরা এসেও পিঠ চাপড়ে দিলেন কোরককের। বিদেশিরা এই ধুতি-পাঞ্জাবিতে দেখে হাঁ। মাঠের বাইরে তখন ওয়ার্মআপ করছেন লিওনেল মেসি। কিন্তু তাকে ছাপিয়েও তখন যেন চোখ টানছে কোরকের বাঙালি ধুতি-পাঞ্জাবি।

    এক বন্ধু পেশায় চিকিত্সক ময়ুখ ভট্টাচার্য যোগ দিলেন একটু বাদে। আবু ধাবির একটি আইটি কোম্পানিতে কাজ করেন সুনন্দ। তিনি ওখান থেকে কাতারে এসেছেন। এই দলটির সকলেই ১৯৯৪ সালে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকে মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। শান্তনু আর কোরক স্কুল টিমে খেলতেন। বাকিরা নিয়মিত না খেললেও ফুটবল পাগল। এ বছর পরিকল্পনা করেছিলেন ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে মিললেন সবাই। কোরকদের সঙ্গে ছিলেন শৈবাল বিশ্বাস, পার্থ মুখোপাধ্যায়। কোরক পেশায় জনসংযোগ আধিকারিক এবং আবৃত্তি শিল্পী। ‘আমরা ওখানে একটা ভিলা ভাড়া করেছিলাম। মোটামুটি জানুয়ারি মাস থেকে পরিকল্পনা করে এগিয়েছি’, বললেন কোরক। জানালেন, আর্জেন্তিনা ও সৌদি আরবের খেলা আর উরুগুয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যাচের টিকিট পেয়েছিলেন লটারিতে। আর থার্ড পার্টি ওয়েব সাইট থেকে কেটেছেন জার্মানি-জাপান খেলার টিকিট। বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে কোরকদের অভিজ্ঞতা হল, আর্জেন্তিনার সমর্থকদের আচরণ ব্রাজিলের তুলনায় বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ। বাঙালি এই দলটি ভারতের পতাকা নিয়ে মাঠে গিয়েছেন। আর্জেন্তিনা সমর্থকরা তাই দেখে তাঁদের ছবিও তুললেন। আর জাপানের সমর্থকদের দেখে কোরকদের মনে হয়েছে, জাপানিরা অত্যন্ত ভদ্র। মাঠে তাঁরা নিজেরাই আবর্জনা ফেলার একটা ব্যাগ হাতে তুলে দিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সমর্থকদের কাছ থেকেও উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছে বাঙালি দলটি। 

    বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কোরকরা জানালেন, উরুগুয়ের খেলা দেখতে গিয়ে জমে গিয়েছিলেন প্রায়। ‘ওখানে সিটের নীচে এসির ডাক্ট থাকে। আমাদের সিটটার নীচেও ছিল। সেই ঠান্ডা উপরে উঠে সোজা পিঠে এসে লাগছিল। হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছিল প্রায়’। আর্জেন্তিনা হারার পর  ওঁরা ঠিক করলেন ব্রাজিলের খেলা দেখবেন। তাই উরুগুয়ের খেলার ৮০ মিনিটের মাথায় বেরিয়ে ক্যাবে চেপে ব্রাজিলের খেলা দেখতে সোজা চলে যান লুসেইল স্টেডিয়াম।  কাতারে ক্যাব চালকদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি অথবা দক্ষিণ ভারতীয়। বিদেশ-বিভূঁইয়ে গিয়ে ক্যাবে বসে অচেনা কারও সঙ্গে বাংলায় কথা বলার অভিজ্ঞতা বেশ রোমাঞ্চকর, জানালেন তাঁরা। কাতার থেকে ফিরে এলেও চিকিত্সক অতনু, ব্যবসায়ী শান্তনুদের বিশ্বকাপ দর্শন এখনই থামছে না। স্কুলের ৩৫ প্রাক্তন মিলে ঠিক করেছেন গোয়ার সৈকতে জায়েন্ট স্ক্রিনে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখবেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)