ভোটের ফলপ্রকাশের আগেই কাঁথিতে তৃণমূলের অন্তর্কলহ প্রকট হওয়া নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জেলার দলীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী অখিল গিরির সম্পর্কের সমীকরণ।
বুথ-ফেরত সমীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের নেতা ও কর্মীদের উজ্জীবিত করতে সোমবার বিকেলে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অভিযোগ, সেখানে ডাকা হয়নি দলের জেলা সভাপতি অখিল গিরি ও তাঁর ছেলে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরিকে। যুব ও একাধিক শাখা সংগঠনের জেলা সভাপতিকেও অভিষেকের ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
দলের সংখ্যালঘু সংগঠনের জেলা সভাপতি শেখ আনোয়ারুদ্দিন, সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তরুণ জানাকে বৈঠকের লিঙ্ক পাঠানো হয়নি বলে দলীয় সূত্রে খবর। অথচকাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দলের ১৩ জন ব্লক সভাপতি, কয়েক জন সহ-সভাপতি, দলের বিধায়ক এবং মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রীকে অভিষেকের ভার্চুয়াল বৈঠকের লিঙ্ক এবং পাসওয়ার্ড আগেই পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া না মিললেও অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরির দাবি, ‘‘জেলা সভাপতি কিংবা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ডাক পাইনি ঠিকই। তবে দাদার (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের) দফতর থেকে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে থাকার কথা বলা হয়েছিল। বাবাকে এবং আমাকে সেখান থেকে লিঙ্ক আর পাসওয়ার্ডও পাঠানো হয়েছিল। গাড়িতে ফেরার পথে আমরা সেই মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি।’’ কিন্তু তিনি যা-ই বলুন না কেন, তাঁকে বা অখিলকে অভিষেকের এক ঘণ্টার বৈঠকে দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন বৈঠকে হাজির কাঁথির একাধিক তৃণমূল নেতা।
এ বিষয়ে কাঁথি এবং তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি পীযুষকান্তি পণ্ডা ও অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘দল যা নির্দেশ দিয়েছে, সেটাই কার্যকর করা হয়েছে।’’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলে মুষল পর্ব চলছে। পিসি আর ভাইপোর দল ভাগ হয়ে গিয়েছে। মোদীজির নেতৃত্বে তৃতীয় বার দিল্লিতে সরকার গঠনের পরে রাজ্যে আর তৃণমূলের অস্তিত্বই থাকবে না।’’
শনিবার বুথ ফেরত সম্ভাব্য ফলাফলের বিশ্লেষণের জন্য একটি সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছিল জেলা তৃণমূল। সেখানেও অখিল এবং সুপ্রকাশ-সহ কয়েক জন নেতাকে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। দল সূত্রে খবর, অখিল শিবিরের সঙ্গে কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক শিবিরের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এ বার উত্তমের সমর্থনে কাঁথিতে পদযাত্রা করেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে খোদ মন্ত্রী এবং জেলা সভাপতি হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করেন, "মুখ্যমন্ত্রী হাঁটছেন, আর অখিল গিরিকে গুঁতো মারছেন উত্তম বারিক। অখিল গিরির অবস্থা খারাপ। চাইলেও তিনি তৃণমূল ছাড়তে পারবেন না। তা হলে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হতে পারে।’’