• কেষ্টর ‘গড়’ কি অক্ষুণ্ণ, জবাব মিলবে আজ
    আনন্দবাজার | ০৪ জুন ২০২৪
  • আজ, মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা। দিল্লির মসনদে কোন জোট (এনডিও নাকি ইন্ডিয়া) বসছে, মঙ্গলবার মঙ্গলবার কয়েক রাউন্ড গণনার পর থেকেই সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। বুথ-ফেরত সমীক্ষা কতটা ঠিক বা বেঠিক হল, সেই মান্যতার পরীক্ষাও আজ। কিন্তু, তার আগে সম্ভাব্য ফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলল সোমবার দিনভর। শাসক-বিরোধী সব শিবিরেই। বিশেষ করে জেলবন্দি নেতা অনুব্রত মণ্ডলের ‘গড়’ বীরভূমের দুই আসন তৃণমূল কংগ্রেসেরই থাকছে কি না, সে পরীক্ষাও আজ।

    বুথ-ফেরত অধিকাংশ সমীক্ষায় এ রাজ্য এবং দেশে বিজেপি-কে এগিয়ে রাখলেও তৃণমূল কিংবা সিপিএম দাবি করছে, সমীক্ষায় দাবি করা ভোট শতাংশের হিসেব কিছুতেই মিলবে না। বরং অনেকেই মনে করছেন, বামের ভোট আগের থেকে বাড়বে। আবার এটাও সত্যি, সমীক্ষার ইঙ্গিত দেখে বাম-কংগ্রেস জোট ও তৃণমূল শিবিরে একটা ধুকপুকানি কাজ করছে। যদি বুথ ফেরত সমীক্ষা সত্যি হয়!

    একাধিক সমীক্ষা অবশ্য বীরভূম জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলকেই এগিয়ে রেখেছে। বোলপুরে তাদের প্রার্থী বড় ব্যবধানে জয়ী হবেন বলে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল কংগ্রেসও। বীরভূম কেন্দ্রেও চতুর্থ বারের জন্য শতাব্দী রায় জিততে চলেছেন বলে দাবি করছে শাসকদল। শতাব্দী নিজে বলছেন, ‘‘আমি জিতছি, সে ব্যাপারে কোনও সংশয় নেই। ব্যবধান কতটা বাড়ে সেটাই দেখার।’’ যদিও বোলপুর কেন্দ্রের মতো বীরভূম কেন্দ্রে সেই জয় ততটা অনায়াস হবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে দলের অন্দরে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, বেশ কয়েকটি সমীকরণের উপরে জয় কিংবা জয়ের ব্যবধান নির্ভর করছে। সেই সব সমীকরণ এ-দিক ও-দিক হলে ‘লিড’ আগের বারের থেকে অনেকটা কমে যেতে পারে। যদিও বড় ব্যবধানে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘ভোটেরর পরেই তো আমরা বিজয় মিছিল করে দিয়েছি। সারা বাংলার ক্ষেত্রে যদি বলা হয়, অধিকাংশ আসন তৃণমূল কংগ্রেস পাবে। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার সঙ্গে যে বঞ্চনা করেছে, তার জবাব মানুষ ভোটবাক্সে দিয়েছে। বাক্স খুললেই জোড়া ফুল দেখবে সকলে, আর বিরোধীরা সর্ষেফুল দেখবে!’’ কাজল প্রত্যয়ী হলেও অঙ্কটা ততটা সহজ নয় বলেই মনে করছেন শাসকদলের একাংশ নেতা-কর্মী। এর আগে তিন বার বীরভূম থেকে জিতেছেন শতাব্দী। প্রতিবার জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছিলেন ৮৮ হাজার ৯২৪ ভোটে। তার পরেও এ বার কেন সংশয়? এক তৃণমূল নেতা মনে করাচ্ছেন, গতবার এই লোকসভা আসনের সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া ও রামপুরহাট —এই ৪ আসনে বিজেপির থেকে শতাব্দী পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু, তাঁকে জয় এনে দেয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুরারই, নলহাটি ও হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্র। জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘এ বার আমাদের প্রার্থীর জিতবেন, তাতে সংশয় নেই। কিন্তু, ব্যবধান নির্ভর করছে, যে চার আসনে আমরা আগে পিছিয়ে ছিলাম, সেখানে ব্যবধান কতটা কমছে গত বারের চেয়ে। পাশাপাশি মুরারই, নলহাটি ও হাঁসনে আগের বারের ‘লিড’ ধরে রাখা যাচ্ছে কি না, সেটাও বড় বিষয়।’’

    জেলা তৃণমূলের একাংশের মনে, এ বার তাদের ‘বড় কাঁটা’ বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদ। তিনি হাঁসন বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা। সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই এলাকা থেকে কতটা পরিমাণ ভোট মিল্টন কাটবেন, তার উপরেই ব্যবধান নির্ভর করছে। বিজেপি এ বার প্রার্থী বাছাইয়ে দেরি করায় এবং শেষ মুহূর্তে প্রার্থী বদল করায় সে-ভাবে প্রচার চালাতে পারেনি। তবু মিল্টনের ভোট কাটাকাটির সম্ভাবনায় প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপিই। তবে, এ বার ভোটের দিন (১৩ মে) মুরারই, হাঁসন ও নলহাটিতে ভোটের হার বেশ খানিকটা কম বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ওই তিন বিধাসসভা এলাকায় গড়ে ৮৫ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভোটদান হলেও, এ বার সেখানে ভোটের হার নেমে এসেছে ৮০ শতাংশ বা তার নীচে। তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছেন, দলের ‘গড়’ বলে পরিচিত ওই তিনটি বিধানসভা এলাকায় একে কম ভোট পড়েছে, তার উপরে সংখ্যালঘু প্রার্থী মিল্টন ভোট কাটলে ক্ষতি শাসকদলের। তা ছাড়া বীরভূম কেন্দ্রের অন্য অংশেও যেখানে সংখ্যালঘু ভোটার বেশি, সেখানেও ভাল ভোট মিল্টন পেয়েছেন বলে জল্পনা রয়েছে। মিল্টন রশিদের দাবি, ‘‘মানুষ আমায় ভোট গিয়েছেন। জেতা-হারার ব্যবধান সীমিত থাকবে কয়েক হাজার ভোটে।’’

    আবার তফসিলি জাতি-জনজাতির ভোটের একটা অংশ, যা গত লোকসভায় বিজেপির দিয়ে সরে গিয়েছিল, মহিলাদের ভোট লক্ষ্মীর ভান্ডারের সৌজন্যে তাদের দিকে ফিরেছে বলে আশাবাদী শাসকদল। বিজেপি প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘হিন্দু ভোটের একটা বড় অংশ আমি পাব বলে আশাবাদী।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বাবন দাসের দাবি, ‘‘বুথ ফেরত সমীক্ষার থেকে ভাল ফল হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)