রাজ্য হোক বা কেন্দ্র, বুথ ফেরত সমীক্ষায় সর্বত্র বিজেপির নজরকাড়া ফলের ইঙ্গিত মিলেছে। তাতে বিশেষ আমল না দিয়েও গণনার সময়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিচ্ছেন সব দলের নেতৃত্ব। বিশেষত ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও ভাবে গণনাকেন্দ্র ছাড়া চলবে না বলে কাউন্টিং এজেন্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে খবর, রবিবার এক ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এজেন্টদের গণনার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাউন্টিং টেবিলে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। গণনা দেখভালের জন্য পুরুলিয়ায় দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, পর্যবেক্ষক তন্ময় ঘোষ, প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো ও বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোকে নিয়ে একটি দলও গড়ে দিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাতেই সমস্ত কাউন্টিং এজেন্টদের পুরুলিয়া শহরে আনে তৃণমূল নেতৃত্ব। তার আগে বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে তাঁদের আরও এক বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গণনায় কী করণীয়, তা আরও এক বার ঝালানোর পাশাপাশি, ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ইভিএমের ফলাফল যাচাই করতেও বলা হয়েছে এজেন্টদের। জেলা সভাপতি বলেন, “গণনাকেন্দ্রে যে সব এজেন্টরা থাকবেন, তাঁদের সকলকে কী করণীয়, তা বিশদ জানানো হয়েছে। বিজেপি যাতে গণনায় কোনও ভাবে কারচুপি করতে না পারে, তা নজরে রাখতে বলা হয়েছে।”
এ দিন বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের কাউন্টিং এজেন্টদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় দলের তরফে। কী ভাবে ব্যালট ও কন্ট্রোল ইউনিট নম্বর, ভিভিপ্যাট পরীক্ষা করতে হবে, মক পোলিংয়ের ভোট মোছা হয়েছে কি না, তা ইভিএমে যাচাইয়ের বিষয়টি হাতেনাতে শেখানো হয়। বাঁকুড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের এজেন্টরা অভিজ্ঞ। তাও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
বুথ ফেরত সমীক্ষা মনোবল বাড়ালেও ভোট গণনা নিয়ে সতর্ক গেরুয়া শিবিরও। ইতিমধ্যে রাজ্য বিজেপির তরফে জেলায় জেলায় প্রতিনিধি পাঠিয়ে এজেন্টদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গণনার আগের দিন বেশির ভাগ এজেন্টদের জেলায় নিয়ে এসে বিশেষ জায়গায় রেখেছে বিজেপি নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, মূলত গ্রামাঞ্চলে এজেন্টদের যাতে কোনও ভাবে তৃণমূল ভয় দেখাতে না পারে, তাই এই পন্থা। গণনার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টেবিলে নজর রাখার পাশাপাশি প্রত্যেক বুথের ভোট সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এজেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কর্মীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রে গিয়ে কোনও ভাবে রিগিংয়ের মধ্যে পড়লে পাল্টা জবাব দেওয়ারও নির্দেশ পেয়েছেন কর্মীরা। বাঁকুড়ার এক বিজেপি নেতা বলেন, “আমাদের এজেন্টরা গণনাকেন্দ্রে এর আগেও নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলেছেন। মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়েই তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন।” গণনাকেন্দ্রের বাইরে ভালমতো কর্মীর জমায়েত থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়ে দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, “গণনার যাবতীয় প্রস্তুতি আমরা সেরে ফেলেছি। কর্মীরা যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।”
কাউন্টিং এজেন্টদের বিশেষ ভাবে সর্তক থাকা থেকে প্রতি স্তরে বিশেষ নজরদারির জন্য বলা হয়েছে বলে জানান বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গাও। তাঁর দাবি, তৃণমূল গণনায় কারচুপি ও চুরিতে ওস্তাদ। গত বিধানসভাতেও তা দেখা গিয়েছিল। তাই সকলকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “ইভিএম থেকে যে ফল বার হবে, তা কাগজে লিখে যোগ করা হবে। দুই তথ্যে যাতে কোনও ফারাক না থাকে, তা নিয়ে সতর্ক থাকবেন এজেন্টরা। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ফল আপলোড না হওয়া পর্যন্ত গণনাকেন্দ্র ছাড়ৃবেন না এজেন্টরা।”
কংগ্রেস সূত্রেও খবর, ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও নেতা রাহুল গান্ধী কর্মীদের শেষ পর্যন্ত গণনার টেবিলে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। পুরুলিয়ার দলীয় প্রার্থী নেপাল মাহাতো জানান, নেতৃত্বের নির্দেশ কর্মীদের জানানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ হবে।