'দিদিকে দিদির পাশে দেখতে চাই'! দীপ্সিতাকে অভাবনীয় আহ্বান তৃণমূলকর্মীদের...
২৪ ঘন্টা | ০৪ জুন ২০২৪
বিধান সরকার: ভোটগণনা তখনও চলছে। তার মাঝেই শ্রীরামপুর লোকসভা আসনে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিপরীতে দাঁড়ানো দীপ্সিতা ধরকে তৃণমূলে যোগ দিতে আহ্বান জানালেন সেখানে উপস্থিত তৃণমূলকর্মীরা। তাঁরা দীপ্সিতাকে সরাসরি তৃণমূলে চাইলেন।
শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগণনা তখন চলছে শ্রীরামপুর কলেজে। ইভিএম খোলার পর থেকেই সেখানে দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির কবীরশংকর বোস ও সিপিআইএম-এর দীপ্সিতা ধরের থেকে এগিয়ে যেতে থাকেন। প্রতি রাউন্ড শেষে দেখা যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবধান লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়তে থাকে। দশ-বারো রাউন্ড গণনা শেষে দেখা যায়, ব্যবধান প্রায় লক্ষাধিক ভোট। ফল স্পষ্ট হতেই কার্যত পরাজয় স্বীকার করে নেন দীপ্সিতা।ভোট প্রচার-পর্বে বামেদের তরুণ মুখ দীপ্সিতার সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠান্ডা-গরম কথাবিনিময় জোরকদমে চলেছিল। দীপ্সিতা তিন বারের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'মিস্টার ইন্ডিয়া' বলে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। কল্য়াণ দীপ্সিতাকে পাল্টা 'মিস ইউনিভার্স' বলেন কল্যাণ।আজ গণনাকেন্দ্রে পরাজয় নিশ্চিত হতেই সাংবাদিকদের দীপ্সিতা বলেন, 'দুর্নীতি-ইস্যুতে ভোট হয়নি। বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষ তৃণমূলকে বেছে নিয়েছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিরোধী আমরা নই, তবে আমরা ভাণ্ডার দিয়ে চাকরি বিক্রি করার বিরুদ্ধে। সেটা আমরা মানুষকে বোঝাতে চেয়েছি। আমরা আবার মানুষের কাছে যাব। আবার তাঁদের বোঝাব।'দীপ্সিতাকে দেখে তৃণমূলকর্মীরাও এগিয়ে আসেন। তাঁরা আবদার করে দীপ্সিতাকে বলেন, 'আপানার বক্তৃতা খুব ভালো লাগে। আপনার মতো নেত্রী চাই। দিদিকে দিদির পাশে দেখতে চাই। আপনার মতো মানুষকে চাই। তৃণমূলকর্মীদের এহেন আবদারে স্পষ্টতই লজ্জা পেয়ে যান দীপ্সিতা। হাসিমুখে বারবার নমস্কার করতে থাকেন সমবেত তৃণমূলকর্মীদের। তবে বামনেত্রী তারই এক ফাঁকে জানান, তিনি লাল ঝান্ডার রাজনীতিই করবেন!শ্রীরামপুর কেন্দ্রে ভোট ছিল পঞ্চম দফায়, ২০ মে। শ্রীরামপুর লোকসভায় রয়েছে জগৎবল্লভপুর, ডোমজুর, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া নিয়ে শ্রীরামপুর লোকসভা। এই আসনে এবার ভোট পড়েছে ৭৬.৪৪ শতাংশ। শ্রীরামপুর আসনটি খুব বিশিষ্ট। এটি মূলত শিল্পাঞ্চল, কিন্তু এর এই শিল্প-এলাকার 'হিন্টারল্যান্ড' বা পশ্চাদভূমিতে রয়েছে কৃষির প্রভাব। শিল্প ও কৃষির আশ্চর্য মিশেলে কেন্দ্রটির বাসিন্দা তথা ভোটারও খুব বিচিত্রধর্মী। আবার ভাষার দিক থেকেও আসনটি খুব বিচিত্র। এখানে রাজস্থান বিহার ও উত্তর প্রদেশের বাসিন্দারাও বিপুল সংখ্যায় থাকেন। এখানে ২৫ শতাংশই নন-বেঙ্গলি। আসনের এই সার্বিক বিচিত্রতাকে মোকাবিলা করেই এখানে ভোটে লড়তে হয়। কাজটা কঠিন। আর সেই কঠিন কাজটা দীর্ঘ সময় জুড়ে এখানে করে আসছেন তৃণমূলের কল্যাণ। আশির দশকের গোড়া থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত শ্রীরামপুর লোকসভা থেকে কোনও রাজনৈতিক দলই দু’বারের বেশি জিততে পারেনি। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল, টানা তিন বার জিতে সেই নজির যদিও ভেঙে দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার লোকসভা ভোটে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের দীপ্সিতা এবং বিজেপির কবীরশঙ্কর বসু।২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুরে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৭০৭ ভোট। বিজেপির দেবজিৎ সরকার হয়েছিলেন দ্বিতীয়। তিনি পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৭১ টি ভোট।