• রাগবি, বেসবলের দেশে কতটা সফল হবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট' কী বলছেন সম্বরণ, ঝুলনরা'...
    আজকাল | ০৫ জুন ২০২৪
  • সম্পূর্ণা চক্রবর্তী আমেরিকা মানেই হলিউড, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অথবা নাসা। তবে এসবের মধ্যেও খুব পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্রের খেলাধুলো। সেখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনটে খেলা আমেরিকান ফুটবল, যাকে আমরা রাগবি বলি, বেসবল এবং বাস্কেটবল। দূর দুরন্ত পর্যন্ত ক্রিকেটের কোনও চিহ্ন নেই। এবার এই দেশেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথভাবে এই মেগা টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিশ্বকাপ তো আর পাড়ার টুর্নামেন্ট না। তার জন্য স্টেডিয়াম, পরিকাঠামো লাগে। ১০০ দিন আগেও যা মজুত ছিল না আমেরিকায়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম, মাঠ, পিচ সবই তৈরি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে ড্রপ ইন পিচ। ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম তোলার জন্য প্রস্তুত সে দেশের ক্রিকেট কর্তারা। কিন্তু আদৌ কতটা প্রস্তুত আমেরিকাবাসী? মাঠ ভরবে? ক্রিকেটকে গ্রহণ করতে পারবে বেসবলের দেশ? নাকি পরীক্ষার পথে হাঁটতে গিয়ে ডুববে আইসিসি? কী বলছেন দেশের এবং বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটাররা? সম্বরণ ব্যানার্জি - আইসিসি এবার বিশ্বকাপকে পরীক্ষা হিসেবে নিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট অনেক দিনই মৃতপ্রায়। তরুণ প্রজন্ম ক্রিকেট খেলে না। আমেরিকাতে ক্রিকেট জনপ্রিয় করার জন্য, খেলাটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আইসিসি এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আমেরিকানরা ক্রিকেট দেখবে না। খেলা দেখবে ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশের লোকেরা। যারা ওখানে বসবাস করে। ১০-১৫ জন আমেরিকান মাঠে আসতে পারে। অনেক ক্রিকেটার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলেনি। আমরা যাকে ক্রিকেটের বাইবেল বলি, সেই বাইশ গজ কেমন হবে সেই নিয়ে প্রশ্ন আছে। যে স্টেডিয়ামগুলোয় খেলা হবে, তাতে বেশি সংখ্যক লোক ধরে না। এই অবস্থায় আমেরিকায় বিশ্বকাপ ঠিক কতটা জনপ্রিয় হবে জানা নেই। খেলা শুরু হলে বুঝতে পারব। ঝুলন গোস্বামী - আমেরিকায় ফুটবল বাস্কেটবল, বেসবল সবসময় ওপরে। ক্রিকেট আগে অলিম্পিকে ছিল না, এখন অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেট থাকবে। সুতরাং, নিশ্চয়ই এবার ধীরে ধীরে আমেরিকা ক্রিকেট প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণ করবে। এখানকার ভারতীয়, পাকিস্তানি, শ্রীলঙ্কা, ব্রিটিশ সম্প্রদায়গুলো ক্রিকেটকে গ্রহণ করে নিয়েছে। এটা এই দেশের নতুন খেলা। সময় লাগবে, তবে আসতে আসতে এগিয়ে যাবে। এর আগেও চেষ্টা করা হয়েছিল। শচীনের নেতৃত্বে আমেরিকাতে লিজেন্ডস ক্রিকেটের একটা টুর্নামেন্ট হয়েছিল। যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল। তবে দুর্ভাগ্যবশত তখন ক্রিকেটের মাঠ তৈরি করতে পারেনি। বেসবলের মাঠেই খেলা হয়েছিল। এবার নিজস্ব স্টেডিয়াম করেছে। আশা করছি প্রচুর লোক হবে। তবে স্থানীয় দলকে ভাল খেলতে হবে। তাহলে আগ্রহ বাড়বে। যেমন ফুটবলে স্থানীয় ক্লাব না জিতলে আগ্রহ বাড়ে না। বাঙালিদের দিয়ে বিচার করা যাবে না। আমাদের আগ্রহ বেশি, উত্তেজনার বশে সবেতেই এগিয়ে যাই। আমরা ব্যতিক্রমী। কিন্তু স্থানীয় সম্প্রদায়ের উৎসাহ বাড়াতে বিশ্বকাপে আমেরিকা দলকে ভাল খেলতে হবে। ক্রিকেট নিয়ে ছোটদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। ভারতীয়, পাকিস্তানি, শ্রীলঙ্কার লোকেরা ছেলেমেয়েদের মধ্যে ক্রিকেট সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। এত বড় দেশে একসঙ্গে সবাই এবারই বিশ্বকাপে আগ্রহ দেখাবে, এটা ভাবা উচিত নয়। সময় লাগবে। এবার বিশ্বকাপ, তারপর অলিম্পিক আছে। ধীরে ধীরে আমেরিকায় ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে যাবে।লক্ষ্মীরতন শুক্লা - আমেরিকায় বিশ্বকাপ মানে গোটা বিশ্বে ক্রিকেটের প্রসার বাড়ছে। যা খুবই ভাল দিক। আমরা সবসময় নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট তেমনভাবে খেলা না হলেও বিশ্বকাপের মতো একটা বড় ইভেন্ট মানুষের আগ্রহ বাড়াবে। তাছাড়া ওখানে প্রচুর ভারতীয় আছে, যারা সুযোগ পায় না মাঠে গিয়ে খেলা দেখার। তাঁরাও বাকিদের উৎসাহিত করবে খেলা দেখতে। সৌরাশিস লাহিড়ী - আইসিসি বিশ্বক্রিকেটকে যেভাবে পরিচালনা করছে বাহবা দিতেই হবে। তাঁদের লক্ষ্য ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। সেটার জন্য আমেরিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়েছে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ক্রিকেটের গৌরব ফিরিয়ে আনা উদ্দেশ্য। সঙ্গে আমেরিকাকেও জোড়া হয়েছে কারণ পৃথিবীর সবথেকে প্রগতিশীল দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা অন্যতম। আমরা প্র্যাকটিস ম্যাচগুলোতে যা দেখেছি, যে মাঠগুলোয় খেলা হচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে আমেরিকাতে ক্রিকেট এগিয়ে গিয়েছে। দারুণ উদ্যোগ। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা সেখানে গিয়ে যখন বিশ্বকাপের মতো একটা টুর্নামেন্টে অংশ নেবে, অবশ্যই ওখানকার লোকজনের আগ্রহ বাড়বে। ফেভারিট ক্রিকেটারদের খেলতে দেখলে সবার উৎসাহ বাড়বে। বেশি সংখ্যক মানুষ খেলাটার বিষয়ে জানতে চাইবে, নিজেরা খেলতে চাইবে। আমার মনে হয় আমেরিকায় বিশ্বকাপ যথেষ্ট সফল হবে। ভাল টুর্নামেন্ট দেখার অপেক্ষায়। শিবশঙ্কর পাল - নতুন জিনিস দেখার আগ্রহ থাকে মানুষের। ক্রিকেট আজকাল সব জায়গায় খেলা হয়। নেদারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডও এখন ক্রিকেট খেলে। আমার মনে হয় মাঠে লোকজন হবে। আমেরিকা দলও ভাল খেলছে। এটা স্থানীয়দের মাঠে আসতে উৎসাহিত করবে। আইসিসি একটা নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করছি সফল হবে। 
  • Link to this news (আজকাল)