• বারাণসী থেকে জয়ের হ্যাটট্রিক গড়লেও ফিকে হল "মোদি ম্যাজিক"
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৫ জুন ২০২৪
  • বারাণসী, ৪ জুন : বারাণসী থেকে জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন নরেন্দ্র মোদি। তবে এনডিএর আশানুরূপ ফল না করার প্রতিফলন ঘটল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জয়ের ক্ষেত্রেও। বারাণসী আসন থেকে ৬ লক্ষ ১২ হাজার ৯৭০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। অজয় রাই পেয়েছেন ৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৫৭ ভোট। কংগ্রেসের প্রার্থীর তুলনায় ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৫১৩ ভোট বেশি পেয়েছেন। বহুজন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী আখতার জামাল লারি পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৭৬৬ ভোট।

    তবে উল্লেখযোগ্য হল, গতবারের তুলনায় তাঁর ব্যবধান কমল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। গতবার তিনি এই কেন্দ্রেই প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। ‘মোদি ম্যাজিক’ অনেকটাই ফিকে হল।

    ২০১৪ সালে মোদি এখানে জিতেছিলেন ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৭৮৪ ভোটে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হারাতে পেয়েছিলেন ৫৬ শতাংশেরও বেশি ভোট। পরের বার, ২০১৯-এ সেই ব্যবধান অনেকটাই বেড়ে যায়। সেবার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শালিনী যাদবকে ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫০৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন মোদি। ভোট পেয়েছিলেন ৬৩.৬২ শতাংশ।
    উল্লেখ্য, অজয় রাই নিয়ে এই নিয়ে এই শহরে তৃতীয় বার নির্বাচনে লড়লেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি হেরে যান । সুতরাং প্রার্থী হিসেবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও  এহেন প্রার্থীই  একসময় মোদির থেকে এগিয়ে রইলেন ৬ হাজার ২২৩ ভোটে। পরে যতই তিনি পিছিয়ে পড়ুন মোদির এবারের পারফরম্যান্স যে গত দুবারের তুলনায় অনেকটাই নিষ্প্রভ, তা অতি বড় মোদি-ভক্তও মেনে নেবেন।

    এদিকে রামমন্দির ইস্যু ম্যাজিক ঘটাতে পারল না যোগীরাজ্যেও । ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল উত্তর প্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে  ভারতীয় জনতা পার্টি। ভোটপূর্ববর্তী সমীক্ষা, বুথফেরত সমীক্ষা- সব ক্ষেত্রেই  উত্তর প্রদেশে এগিয়ে ছিল বিজেপি। গোবলয়ের এই রাজ্যে পদ্মশিবিরের আসন সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছিল একাধিক  সমীক্ষা। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশের প্রাথমিক প্রবণতাতেই যোগীরাজ্যে পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। সবাইকে চমকে দিয়ে উত্তর প্রদেশে এগিয়ে গিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেসও গত বারের থেকে বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়া জোট বিজেপিকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে উত্তর প্রদেশে।

    দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি লোকসভা আসন রয়েছে উত্তর প্রদেশে। তাই দেশের সার্বিক ফলে উত্তর প্রদেশের ফলের প্রভাব থাকে স্পষ্ট। উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ৬২টি আসনে ২০১৯ সালে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে শেষ পাওয়া খবরে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে এগিয়ে ৩২ টি আসনে।  সেখানে সমাজবাদী পার্টি এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ৩৮ টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ৬ টি আসনে। উত্তর প্রদেশে বিজেপি-র এনডিএ শরিক আরএলডি ২টি আসনে এগিয়ে।

    উত্তর প্রদেশে ২০১৯ সালে অমেঠী আসনে হেরে যান রাহুল গান্ধি। সেই আসনে জিতে মন্ত্রীও হন স্মৃতি ইরানি। এবার হেরেছেন হেভিওয়েট নেত্রী স্মৃতি ইরানি । কংগ্রেসের কিশোরী লাল জয় দেবে দিয়েছেন অমেঠীতে।মায়ের রেকর্ড ভেঙে রাহুল রায়বরেলিতে জিতেছেন ৪ লক্ষের বেশি ব্যবধানে। জিতছেন রাজনাথ সিংও। 

    সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব কনৌজ কেন্দ্র থেকে এগিয়ে। তাঁর স্ত্রী ডিম্পল যাদব মৈনপুরী কেন্দ্র থেকে এগিয়ে রয়েছেন। ভোট শেষের পরই অখিলেশ কর্মী-সমর্থকদের সজাগ থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি । বিজেপি-র ‘মিথ্যা প্রচার’-এর ফাঁদে পা না দেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে গণনা না হওয়া পর্যন্ত মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন।

    ভোটব্যাঙ্কে এমন পরিবর্তনের পিছনে কারণ কি ? মনে করা হচ্ছে, এর পিছনে যে কটি ফ্যাক্টর রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম জাতিগত জনগণনা ইস্যু। রাহুল গান্ধি বার বার দাবি করেছেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে জাতিগত জনগণনা হবে। অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ জোর দিয়েছেন ‘পিডিএ’র উপরে। অর্থাৎ ‘পিছড়া দলিত অল্পসংখ্যক’। এর আগে যাদব ও মুসলিমদেরই প্রার্থী করতেন অখিলেশ। কিন্তু এবার দলিতদেরও প্রার্থী করেছে তাঁর দল।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)