পাহাড় ও সমতলের শাসক শিবিরের একাংশের আশঙ্কাই সত্যি হল। পাহাড়ে বিজেপির ‘লিড’ কমিয়ে দিলেও শিলিগুড়ি সমতলের ভোটের ব্যবধানেই দার্জিলিং আসনে তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামা হারলেন। মঙ্গলবার রাত অবধি কমিশনের তথ্য অনুসারে, দার্জিলিং কেন্দ্রে বিজেপির রাজু বিস্তা এক লক্ষ ৭৮ হাজারের বেশি ভোটে জিততে চলেছেন। যেখানে গত ২০১৯ সালে বিস্তা জিতেছিলেন চার লক্ষ ১৩ হাজারের বেশি ভোটে। ভোট কমলেও টানা চতুর্থ বার এই কেন্দ্রে বিজেপি জিতল।
দলীয় সূত্রের খবর, গত লোকসভার মতই শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির ‘লিড’ সামাল দিতে পারেনি তৃণমূল। তিন বিধানসভা মিলিয়ে রাজু বিস্তা তৃণমূল প্রার্থীর থেকে এক লক্ষ ৮৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। যা (জয়ের ব্যবধান) বিস্তাকে দ্বিতীয় বার সাংসদ করল লোকসভায়। যদিও পাহাড়ের গত এক বছরের শাসক-সঙ্গীর নিয়ন্ত্রণ দেখে, ‘লিড’-এর আশা করা হলেও তা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার অনীত থাপারা দিতে পারেনি। শুধু তাঁরা পাহাড়ের ব্যবধান গত বারের থেকে দেড় লক্ষ ভোটের মতো কমিয়েছেন।
ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী মুনীশ তামাং বিশেষ দাগ কাটতে পারেননি। গতবার কংগ্রেস ও সিপিএমের যৌথ ভোটের থেকেও তিনি কম ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামা বলেন, ‘‘পাহাড় থেকে ভাল ফল প্রত্যাশা করেছিলাম। সমতল শিলিগুড়িতে একেবারেই ভাল ফল হয়নি। নিশ্চয় এর কারণ দেখা হবে।’’
দুপুরের পরে এক লক্ষ ভোটে এগিয়ে যেতেই রাজু বিস্তা গোর্খা জনমু্ক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং এবং জিএনএলএফ প্রধান মন ঘিসিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। সকালেই বিস্তাকে শুভেচ্ছা জানান। রাজু বলেছেন, ‘‘মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই কেন্দ্রের মানুষের জন্য কাজ করছিলাম। তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।’’ ভোটের ফলের পর অনীত বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যের সঙ্গে থাকছি। মানুষের রায়কে মাথা পেতে নিলাম। চেষ্টা করে আমরা পারিনি। রাজু বিস্তাকে শুভেচ্ছা। গত ১৫ বছরে না করলেও, উনি নিশ্চয়ই পাহাড়ের মানুষের দাবিদাওয়া পাঁচ বছরে মিটিয়ে দেবেন, এই আশা রাখছি।’’
এ বার শিলিগুড়ি মহকুমায় খারাপ ফলাফল হলেও লাগোয়া চোপড়ায় ৯৩ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছে তৃণমূল। গত বছর যেখানে ৪৮ হাজার ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল প্রার্থী। দলের নেতারা জানাচ্ছেন, চোপড়ার তৃণমূল নেতৃত্ব সফল হলেও, শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতৃত্ব ব্যর্থ। অথচ, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এবং শিলিগুড়ি পুরসভা তৃণমূলের দখলে। সেখানে রাত অবধি পাওয়া তথ্য বলছে, শিলিগুড়ি শহরে একটি ওয়ার্ডে শুধু তৃণমূল জিতেছে। গ্রামীণ এলাকাতেও হাল খারাপ তৃণমূলের। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেছেন, ‘‘হারের কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।’’ আর শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘কোথায় খামতি হল, তা দেখতে হবে।’’