• শেষ হাসি পার্থের, নতুন করে শুরুর ভাবনা অর্জুনের
    আনন্দবাজার | ০৫ জুন ২০২৪
  • ব্যারাকপুর কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়েছিল কিছুটা দেরিতে। কারণ, মঙ্গলবার সাতসকালে বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহের সঙ্গে হাতাহাতি বাধে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। গণনা প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগ তুলেছিলেন অর্জুন। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, নিজের পরাজয় বুঝতে পেরে ‘বেপরোয়া’ অর্জুন নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন।

    রাত ৯টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫ লক্ষ ২০ হাজার ২৩১ ভোট পেয়ে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। অর্জুন পেয়েছেন ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭৯৩ ভোট। পার্থের জয়ের ব্যবধান ৬৪ হাজার ৪৩৮।

    এ দিন সকালে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ভোট গণনা কেন্দ্রে ঢোকার মুখে অর্জুন যাতে তাঁর সমস্ত নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে ভিতরে ঢুকতে না পারেন, সেই দাবিতে সরব হন বীজপুর, জগদ্দল ও ব্যারাকপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী, সোমনাথ শ্যাম ও রাজ চক্রবর্তী। নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন তাঁরা। নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা পেয়ে প্রথমেই দমে যান অর্জুন। বেলা যত গড়াতে থাকে, দেখা যায়, একটু একটু করে পিছিয়ে পড়ছেন তিনি। বিজেপি কর্মীরা মাথায় হাত দিয়ে অর্জুনকে ঘিরে মাটিতে বসে পড়েন। কয়েক জন কাঁদতে থাকেন।

    চতুর্থ রাউন্ডের পর থেকে দু’জনের ভোটের ব্যবধান যখন ৩০ হাজারের বেশি হয়ে গিয়েছে, তত ক্ষণে এজেন্ট ও অনুগামীরা মোটামুটি বুঝে যান, পার্থই জয়ের পথে এগোচ্ছেন। শুরু হয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। অর্জুনকে কটাক্ষ করেন কেউ কেউ। ফের ক্ষেপে ওঠেন বিজেপি প্রার্থী। রজত মৈত্র নামে এক তৃণমূল এজেন্ট অভিযোগ করেন, ‘‘গণনা চলাকালীন আমি একটি ঘর থেকে বেরোনোর সময়ে সিঁড়ির মুখে অর্জুন আমার মুখে মারেন।’’ অর্জুনও পাল্টা অভিযোগ করেন, তাঁকে কটূক্তি করা হয়েছিল।

    এর পরেই অর্জুনকে ঘিরে ধরেন তৃণমূলের লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই অবশ্য পুলিশ আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা তাঁদের সরিয়ে দেন। কর্মীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন পার্থ। তিনি বলেন, ‘‘মাথায় দিদির হাত ছিল, তাই ব্যারাকপুরের সিংহ ছিল। এখন নিজেকে নেংটি ইঁদুর ছাড়া কিছুই ভাবা উচিত নয় ওঁর। আমার দীর্ঘ দিনের সতীর্থ উনি। আশা করব, ব্যারাকপুরে ভোট পরবর্তী কোনও হিংসাত্মক কাজ যাতে না হয়, সে খেয়াল উনি রাখবেন।’’

    জয় নিশ্চিত ধরে নিয়ে বাইরে যখন সবুজ আবির খেলা হচ্ছে, তখনই বেরিয়ে যান পার্থ। বলেন, ‘‘ভিড়টাকে সামাল দিই, তা না হলে ভিড়ের মধ্যে থেকে বিজেপির কাউকে যদি কিছু কুকথাও বলা হয়, তা ঠিক হবে না।’’

    এর বেশ কিছু ক্ষণ পরে পুলিশি পাহারায় বেরিয়ে যান অর্জুন। ভিড় পাতলা হয়ে এলেও তার মধ্যে থেকেই আওয়াজ ওঠে ‘হেরো হেরো’ বলে। অর্জুন বলেন, ‘‘আবার নতুন করে শুরু করতে হবে, এটাই রাজনীতি।’’

    আইএসএফ বা নির্দল প্রার্থীদের তৃণমূল ও বিজেপির বিপুল সংখ্যক এজেন্টের ভিড়ে চোখে না পড়লেও সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষকে এক ঝলক দেখা গিয়েছিল সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ। ফলাফল কোন দিকে যাচ্ছে আঁচ করে তিনি বেরিয়ে যান অল্প সময়ের মধ্যেই। সিপিএমের হাতে গোনা কয়েক জনকে ইতিউতি ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় শেষ বেলাতেও।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)