'কাঠিবাজি' থাকবেই! বাংলায় থমকে গিয়েছে দল, হারের পরই বিস্ফোরক দিলীপ
আনন্দবাজার | ০৫ জুন ২০২৪
কলকাতা: তিনি ছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ৷ জেতা সেই আসন থেকে সরিয়ে তাঁকে এবার প্রার্থী করা হয়েছিল বর্ধমান-পশ্চিম কেন্দ্র থেকে৷ দিলীপ ঘোষের কেন্দ্র বদলের আসলে তাঁকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা ছিল কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তখনই চর্চা শুরু হয়েছিল৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে হারতে হয়েছে দিলীপকে৷ আবার দিলীপ যে কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন, সেই মেদিনীপুরও হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির৷
এতদিন দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও ভোটে হারার পরের দিনই মুখ খুললেন দিলীপ৷ দলের কারও নাম না করলেও রাখঢাক না রেখেই দিলীপ বললেন, রাজনীতিতে কাঠিবাজি এবং চক্রান্ত থাকবেই৷ পরোক্ষে দিলীপ বুঝিয়েও দিয়েছেন, তিনি চক্রান্তের শিকার৷ এ দিন কলকাতায় ফিরে ইকো পার্কে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে দিলীপ বলেন, চক্রান্ত এবং কাঠিবাজি রাজনীতির অঙ্গ। আমি বিষয়টি সেভাবেই নিয়েছি। তার পরেও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি। কিন্তু সাফল্য আসেনি।
একই সঙ্গে দিলীপ দাবি করেছেন, ব্যক্তিগত রেষারেষি এবং দলের ভুল নীতির ফলই এ রাজ্যে ভুগতে হয়েছে বিজেপিকে৷ প্রসঙ্গত, দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি থাকাকালীনই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংসদ সংখ্যা একলাফে ২ থেকে বেড়ে ১৮ হয়েছিল৷ আবার ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও দিলীপ ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি৷ বিধানসভা নির্বাচনে দুশো আসনের লক্ষ্যমাত্রা না ছুঁলেও এ রাজ্যে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৭-এ পৌঁছেছিল৷ তার পরেই দিলীপ দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন৷ রাজ্য সভাপতির পদ হারান তিনি৷ একে একে দিলীপ ঘনিষ্ঠদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজ্য সংগঠনের রাশ চলে যায় শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদের হাতে৷
তাঁকে যে এবারেও কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলা হয়েছিল, তা স্বীকার করে নিয়ে দিলীপ এ দিন বলেন, ‘সব সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ে। বাংলার মানুষ বলবেন এই গুলো ঠিক হয়েছে না ভুল হয়েছে। আমাকে দল যখন যা বলেছে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি। পুরো সততার সঙ্গে করেছি, ফাঁক রাখিনি। এবার বর্ধমানে হেরে যাওয়ার মতো কঠিন সিট ছিল। যাঁরা সেখানে সেদিন ছিলেন, তাঁরাও মেনেছেন একটা জায়গায় অন্তত লড়াই হয়েছে। দলের নীতির উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। যাঁরা আমাকে ওখানে পাঠিয়েছেন তাঁরা ভাববেন।’
তিনি দলের রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়ার পর যে বাংলায় দল সেভাবে এগোতে পারেনি, এ দিন সে বিষয়টিও মনে করিয়ে দিয়েছেন দিলীপ৷ বিজেপি নেতা বলেন, ‘পার্টি চলতে থাকে। লড়াই ও চলতে থাকে। নেতা পাল্টে যায়। এটা ঠিক যে আমরা ২০২১ পর্যন্ত এগিয়েছি। বহু কর্মী শহীদ হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা ১৮ জন সাংসদ এবং ৭৭ জন বিধায়ক পেয়েছিলাম। সেখানেই আমাদের আটকে গেছে। ভোটের শতাংশ একই আছে। আর আসন বাড়েনি। আমরা গত ৩ বছরে এগোতে পারিনি! এটা ভাবতে হবে। আমরা যে গতিতে এগোচ্ছিলাম সেটা সারা দেশে আলোচনার বিষয় ছিল। সবাই অনেক আশা করেছিলাম। কিন্তু সব কর্মীরা নামেনি। দলের গতি রুদ্ধ হয়ে গেলে কর্মীরা হতাশ হয়ে যাবেন।’