কীভাবে জমি দখল করে টাকা হাতাতেন শাহজাহান? নয়া তথ্য ইডির চার্জশিটে
প্রতিদিন | ০৬ জুন ২০২৪
অর্ণব আইচ: গায়ের জোরে জমির মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া হত ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’! এর পর ইচ্ছামতো ক্রেতাদের কাছে সেই জমি বিক্রি করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতেন সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান ও তাঁর সঙ্গীরা। আদালতে পেশ করা চার্জশিটে এমনই দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। সম্প্রতি সন্দেশখালিতে জমি দখল মামলায় শেখ শাহজাহান, তাঁর ভাই শেখ আলমগির, দুই সঙ্গী দিদার বক্স ও শিবু হাজরার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে ইডি।
এই চার্জশিটে জমি দখলের ‘চাঞ্চল্যকর’ পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। ইডির সূত্র জানিয়েছে, সন্দেশখালি অঞ্চলে বিঘার পর বিঘা জমির মালিক কলকাতা বা আশপাশের অঞ্চলের বেশ কিছু বাসিন্দা। তাঁরা স্থানীয় কৃষকদের ওই জমিগুলোতে চাষ করতে দেন। সেরকম কয়েকশো বিঘে জমি পর পর দখল করতে শুরু করেছিলেন শাহজাহান। কীভাবে? জানা গিয়েছে, জমির মালিকদের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা জোগাড় করতেন তিনি। এর পর লোকদের মারফৎ তাঁদের যখন তখন ফোন করে অতিষ্ট করে তুলতো তাঁর সঙ্গীরা। কলকাতায় একাধিক জমির মালিকের বাড়িতে ‘মাসল ম্যান’ পাঠাতো শাহজাহান। রীতিমতো অস্ত্র নিয়ে জমির মালিক ও তাঁদের পরিবারের লোকেদের ভয় দেখানো হত। তাতেও কাজ না দিলে জমিতে যে কৃষকরা কাজ করতেন, তাঁদের উপর চলত অত্যাচার।
ইডির দাবি, এরকমই এক কৃষকের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায় শাহজাহানের সঙ্গীরা। শেষে জমির মালিক জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। তিন দিন পর ওই গৃহবধূকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জমির মালিকরা সন্দেশখালিতে এসে দেখতেন, তাঁদের শস্যভর্তি জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে তা ভেড়িতে পরিণত করা হয়েছে। ইডির আরও দাবি, জমির মালিকরা পুলিশ ও ভূমি দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে গিয়েও কোনও সুরাহা পেতেন না। জমির মালিকদের দিয়ে জোর করে সামান্য টাকার বিনিময়ে শাহজাহান ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ নিয়ে নিতেন। এর পর সেই জমি তথা ভেড়ি বিপুল টাকায় বিক্রি করতেন শাহজাহান। ইডির দাবি, এই ‘খেলা’য় শাহজাহান একাধিক প্রভাবশালীর সাহায্য নিতেন। ওই প্রভাবশালীদের নির্দেশে প্রশাসন ও ভূমি দপ্তরের কর্তারা শাহজাহানের জমি ক্রেতাদের নামে জমিগুলো রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হতেন, চার্জশিটে এমনই দাবি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও অন্য পদ্ধতিতে জমির মালিকের কাছ থেকে সামান্য দামে নিজের লোকেদের নামে জমি কিনে নিতেন শেখ শাহজাহান। নতুন জমির মালিককে বলা হত ওই জমিতে মাছ চাষ করতে। সেই মাছ পুরোটাই বিক্রি করতে হত শাহজাহানকে। তাঁর সংস্থা ওই ব্যক্তিকে দাম মেটানোর জন্য চেক দিত। ওই ব্যক্তি ব্যাঙ্কে গিয়ে সেই চেক ভাঙিয়ে সামান্য কিছু টাকা নিজের জন্য রেখে বাকিটা নগদে শাহজাহানকে দিয়ে দিতেন।
আবার দ্বিতীয় পদ্ধতিতে শাহজাহান তার অনুগামীদের সাহায্যে গায়ের জোরেই জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি দখল করতেন। অন্য কারও নামে জমির মালিকানা দেখিয়ে তাঁকেই বলা হত সেই জমিতে মাছ চাষ করতে। সেই মাছ কিনে নিতেন শাহজাহান। এই বিপুল টাকার একটি অংশ তিনি নাকি কিছু ‘সামাজিক কাজে’ খরচ করতেন। বাকি টাকা দিয়ে সন্দেশখালি অঞ্চলে শাহজাহান নাম ও বেনামে বিপুল সম্পত্তি কিনত বলে জানিয়েছে ইডি।