কয়েক মুহূর্তের ঝড়ে লন্ডভন্ড হল রামপুরহাট ২ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েতের দু’টি গ্রাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হাঁসন ২ অঞ্চলের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রাম। শ্রীকৃষ্ণপুর ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাঁসন ১ নম্বর অঞ্চলের বড়চৌকি গ্রাম।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ঝড় আসে। মাত্র ৩০ সেকেণ্ড ঝড়ের স্থায়ীত্ব ছিল। পূর্ব দিক থেকে বোঁ বোঁ শব্দে ধেয়ে আসা বাতাস প্রথমে শ্রীকৃষ্ণপুর লাগোয়া বড়চৌকি গ্রামের পূর্বপাড়ার সাত-আটটি বাড়ির খড় এবং টিনের ছাউনি মাটির বাড়ির উপরে চলে যায়। পরে শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের শান্তিপাড়া, ক্যানেল পাড়া, মালপাড়া এবং গ্রামের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র লাগোয়া বাড়িগুলির উপর আছড়ে পড়ে। ঝড়ের দাপটে হাঁসন তিনমাথা মোড় থেকে দুনিগ্রাম যাওয়ার রাস্তার ধারে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎবাহী খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া শ্রীকৃষ্ণপুর থেকে ভোল্লা শিবপুর যাওয়ার রাস্তার ধারে বিদ্যুৎবাহী খুঁটিগুলির উপরে গাছের ডাল, বাঁশ ভেঙে পড়ে এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
বুধবার সকালে শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে পৌঁছে দেখা যায়, গ্রামে ঢোকার পথে শান্তিপাড়ার বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ির টিন এবং খড়ের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে জানেতুন মল্লিক নামে এক বাসিন্দার বসত বাড়ির টিনের ছাউনি প্রায় অর্ধেক উড়ে গিয়েছে। বসত বাড়ি লাগোয়া গোয়ালঘরের খড়ের ছাউনি সম্পূর্ণ উড়ে গিয়েছে। জানেতুন মল্লিকের বাড়ির পাশে লক্ষ্মীবিবি, ফেলু শেখ-সহ এলাকার ছ’-সাতটি বাড়ি ছাউনির কোনটা আংশিক, কোনওটা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এলাকায় থাকা শিশু, সোনাঝুরি, আম ও বাঁশ বাড়ির উপরে ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েকটি খড়ের পালুই উড়ে গিয়েছে। শান্তিপাড়া পেরিয়ে শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের মালপাড়ায় যাওয়ার রাস্তায় দেখা যায় গ্রামের ভিতরের সাত-আটটি বিদ্যুৎবাহী খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎবাহী তারের উপর বাঁশ গাছ ভেঙে পড়েছে। মালপাড়ার বাসিন্দা আফরাসিদ্দিক আলির বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গিয়ে প্রায় ৫০ মিটার দূরে বাড়ি লাগোয়া পুকুরে গিয়ে পড়েছে। মালপাড়ার বাসিন্দা পঞ্চানন মাল বলেন, ‘‘বছরখানেক আগে ২০ হাজার টাকা খরচ করে অ্যাসবেসটসের ছাউনি দিয়েছিলেন বাবা। ঝড়ের দাপটে অ্যাসবেসটস উড়ে গিয়েছে।’’
মালপাড়ার বাসিন্দা অরুণ মহলদারের টিনের ছাউনি সম্পূর্ণ উড়ে গিয়েছে। ঝড়ের সময় ঘরের ছাউনি ভেঙে পড়েছে মালপাড়ার বাসিন্দা সুখি মালের। তিনি বলেন, ‘‘চার বছরের ছেলেকে নিয়ে ঘরে বসেছিলাম। হঠাৎ ঝড়ের প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পাই। ঝড়ের দাপটে একতলা পাকা বাড়ির মাথার উপরে ছাউনির টিন নড়বড় করতে থাকে। দেওয়াল থেকে ইট খসে পড়তে থাকে। আমি, স্বামী ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে উঠোনে গিয়ে দাঁড়াই।’’
সুখি মালের পাশের বাড়ির বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ মাল বলেন, ‘‘১৪ বছরের ছেলের সঙ্গে ভেঙে পড়া বাড়ির খড়ের ছাউনি তে চাপা পড়েছিলাম। কোনওক্রমে ছেলে প্রথমে বের করি। পরে আমাকে টেনে বের করে।’’ শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া আলেয়া বিবি-সহ আরও সাত, আট জনের বাড়ির চাল সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা হ্যাপি মাস্টার পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি জানালেন, ঝড়ে কতগুলি ঘরের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তালিকা তৈরি করতে উপপ্রধানকে বলা হয়েছে।
রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও অর্ঘ্য দত্ত বলেন, ‘‘গ্রামে কতগুলি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, গ্রামে ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি ভিত্তিতে খাবার, ত্রিপল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতরও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে।’’