কথা ছিল, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা গোসাবাকে সেতুর মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুর কাজের শিলান্যাসও করেছিলেন। কাজ শুরুও হয়েছিল। কিন্তু সেতুর নকশা অনুমোদন না মেলায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে ঠিকাদারি সংস্থা সেতু তৈরির বরাত পেয়েছিল, তারা ইতিমধ্যেই সমস্ত যন্ত্রপাতি, মালপত্র গুটিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে। ফলে গোসাবার সঙ্গে গদখালির সংযোগ স্থাপনের জন্য আপাতত দু’দিকে দু’টি পল্টুন জেটি তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর।
গোসাবা-গদখালির মধ্যে সেতু তৈরি হলে কার্যত বদলে যেত সুন্দরবন এলাকার অর্থনীতি। সরাসরি গাড়িতে চেপে সুন্দরবনের গোসাবা, পাখিরালয় পৌঁছে যেতে পারতেন মানুষজন। এই সেতু তৈরির পরিকল্পনা ও রূপায়ন সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর করলেও সেতু তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজ্য পূর্ত দফতরকে। সেতু তৈরির পাশাপাশি সংযোগকারী রাস্তার জন্যও উদ্যোগ করা হয়। গোসাবার দিকের বসবাসকারীদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু এরই মধ্যে কোস্টাল রেগুলেটরি জ়োন বা সিআরজ়েডের ছাড়পত্রের জন্য সেতুর নকশা পাঠানো হয়। সূত্রের খবর, সেই নকশার অনুমোদন দেয়নি সিআরজ়েড। নকশার পরিবর্তন করতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। নকশা পরিবর্তন করে নতুন নকশা তৈরিতে বিস্তর সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেতু তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায় বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
সেতু তৈরিতে বাধা আসায় দু’পারের মানুষের যোগাযোগের জন্য আপাতত দু’টি লোহার ভাসমান জেটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর। ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হবে এই পল্টুন জেটি দু’টি। ইতিমধ্যেই সুন্দরবন দফতরের তরফে পরিবহণ দফতরকে ২৩ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে জেটি নির্মাণের জন্য। টেন্ডার হয়ে কাজও শুরু হয়েছে।
সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘সেতু তৈরির জন্য জন্য উদ্যোগ করা হলেও সিআরজ়েডে বিষয়টা আটকে যায়। তাই সেতু তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত দু’পাড়ে দু’টি পল্টুন জেটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে।”
সেতু তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশ এলাকার মানুষ। গোসাবার বাসিন্দা সৌমিত্র রায়, নিরাপদ সর্দারেরা বলেন, ‘‘গোসাবা থেকে নদীপথ পেরিয়ে তবে বাস, অটো বা অন্য মাধ্যমে ক্যানিং পৌঁছে ট্রেনে কলকাতা বা সড়ক পথে কলকাতা পৌঁছতে হয়। রাতের দিকে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে নদী পারাপার করতে সমস্যায় পড়তে হয়। সেতু তৈরি হলে এই দ্বীপাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হতেন।” পর্যটন ব্যবসায়ী নিখিল মণ্ডল, সুপ্রিয় দাসেরা বলেন, ‘‘সেতু তৈরি হলে পর্যটকেরা সরাসরি গোসাবা, পাখিরালয়ে চলে আসতে পারতেন। ফলে সুন্দরবনে পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়ত। ব্যবসায় উন্নতি হত।”