এ বারে মুর্শিদাবাদের উপর নজর ছিল গোটা রাজ্যের। কারণ বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং মুর্শিদাবাদে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম লড়াই করছিলেন। বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী হিসেবে ভোটে তাঁদের অনুকূলে হাওয়াও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেল তৃণমূল মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর তো বটেই, সঙ্গে বহরমপুরও দখল করল। তার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এই জয়ের পিছনে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো জনমোহিনী প্রকল্পগুলির অবদান কতটা? তবে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরীর দাবি, ‘‘শুধু কোনও একটি কারণে জয় আসেনি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ দলীয় নেতাকর্মীরা মনপ্রাণ দিয়ে খেটেছেন। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প আমাদের মানবিক সরকার হাতে নিয়েছে। এ রকম নানা কারণে মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’
ভোটের প্রচারে তৃণমূলের স্লোগান ছিল লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথীর মতো প্রকল্প। তাতেই কী এই ফল? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘মানুষকে কিছু পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি এবং তার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিভাজন। দুইয়ের মিশ্রণের এই পরিণাম।’’
জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্র এলাকায় লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের উপভোক্তা রয়েছেন প্রায় ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার। অর্থাৎ জেলার তিন কেন্দ্রের মোট মহিলা ভোটারদের প্রায় ৫৯ শতাংশ লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন। এ বারের মহিলাদের ভোটদানের হার বেশি ছিল।
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে ৭৭.১৪ শতাংশ পুরুষ, ৮৬.০৭ শতাংশ মহিলা এবং ২৮.৫৭ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোটদান করেছেন। আবার জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের ৬৮.৯১ শতাংশ পুরুষ, ৮২.৭৫ শতাংশ মহিলা এবং ১৭.৩৯ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোটদান করেছেন। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে ৭৩.৬১ শতাংশ পুরুষ, ৮১.৬২ শতাংশ মহিলা এবং ৩২.৫৬ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোটদান করেছেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ভোটদানের ক্ষেত্রে শতাংশের বিচারে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে পুরুষদের তুলনায় ৮.০৯ শতাংশ, জঙ্গিপুর কেন্দ্রে ১৩.৮৪ শতাংশ এবং বহরমপুর কেন্দ্রে ৮.০১ শতাংশ বেশি মহিলা ভোটদান করেছেন। সেখানেই গুরুত্ব পেয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার। মুর্শিদাবাদে দু’দফায় ৭ ও ১৩ মে নির্বাচন হয়েছে। তার কয়েকদিন আগেই লক্ষ্মী ভান্ডারের উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে বর্ধিতহারের টাকা ঢুকেছে। ভোটের ৭-১০ দিন এমনভাবে টাকা ঢোকায় তার প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক বলে অনেকে মনে করছেন।