ভোট পরবর্তী হিংসা আর নন্দীগ্রাম— গত কয়েক বছরে দুই-ই যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবারই লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি হিংসার ঘটনা সামনে না এলেও জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে নন্দীগ্রামে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় দু’জন জখম হয়েছেন। আর এতেই শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলের দাবি, আহতরা বিজেপি কর্মী। বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে তারা জখম হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের আমদাবাদ-২ পঞ্চায়েত এলাকার জিরো পয়েন্টে বিজেপি কর্মী সুবোধ বেরার বাড়িতে বিস্ফোরণের আওয়াজ মেলে এ দিন। স্থানীয়েরা সেখানে গিয়ে দু’জন আহতকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। যদিও জখম ব্যক্তিদের ঠিক কোথায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে এলাকাবাসীর মুখে কুলুপ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় নন্দীগ্রাম থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী। হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে এক বাসিন্দার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। দুই জখমের তমলুকের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। পুলিশ তদন্ত করছে।’’
আপাতত শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। নন্দীগ্রাম-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুনীলবরণ জানা বলেন, ‘‘বিজেপি কর্মীর বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।’’ তৃণমূলের দাবি, নন্দীগ্রামে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে বিজেপি কর্মী বাড়িতে বোমা বাধা হচ্ছিল। যদিও বিজেপির জেলা (তমলুক) সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘তৃণমূল হেরে গিয়ে রাতের অন্ধকারে বিজেপি কর্মীর বাড়িতে বোমা রেখে এসেছে। এটা ওদের চক্রান্ত।’’
এদিকে, ভোট পরবর্তী হিংসার খবর মিলেছে খেজুরির দুটি ব্লকে। মঙ্গলবার রাতে খেজুরি-২ ব্লকের বাড় কষাড়িয়া গ্রামে তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে মারামারি হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজয় মিছিলের নাম করে তাদের দলের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করেন বিজেপি কর্মীরা। খবর পেয়ে সেখানে তালপাটি উপকূল থানার পুলিশ যায়। দু’পক্ষকে থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হন এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁকে শিল্লাবেড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। ওই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বুধবার কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
খেজুরি-২ ব্লকের কয়ালচকের বাসিন্দা তথা শাসকদলের এক পঞ্চায়েত সদস্য গণেশ প্রামাণিককে মঙ্গলবার রাতে বিজেপির কর্মীরা মারধর করেন বলে দাবি। তাঁকেও স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। খেজুরির গোডাউন এলাকায় তৃণমূলের একটি কার্যালয় ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। খেজুরির বোগা, মেহেদি নগরেও এ দিন দুপক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত। তৃণমূল কর্মীদের দোকান বন্ধ রাখার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি।
খেজুরি-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সমুদ্ভব দাস বলেন, ‘‘বিজেপির কিছু লোকজন গোটা এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।’’ বিজেপির জেলা (কাঁথি) সম্পাদক পবিত্র দাস বলেছেন, ‘‘এক সিভিক ভলেন্টিয়ার সাধারণ মানুষের সঙ্গে নোংরা আচরণ করেছিলেন। তাই মানুষ প্রতিবাদ করেছেন। এছাড়া গোটা খেজুরি শান্ত।’’