• পঞ্চায়েতের ক্ষোভ লোকসভার ভোটবাক্সে, বিজেপির দখলে শহর নিউ টাউন
    আনন্দবাজার | ০৬ জুন ২০২৪
  • পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে না দেওয়ারই কি কার্যত প্রতিশোধ নিল শহর নিউ টাউন? লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে ভোটের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সিংহভাগ ভোট গিয়েছে বিরোধীদের ঝুলিতে।

    লোকসভা ভোটের দিনেও বুথের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে বছরখানেক আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ভোটারেরা। সেই ক্ষোভের প্রতিফলন হল ইভিএমে। দেখা যাচ্ছে, তিন হাজারেরও বেশি ভোটে শহর নিউ টাউনে হেরেছে শাসকদল তৃণমূল। এ নিয়ে বিজেপির ব্যাখ্যা, শহর নিউ টাউনের ভোট বরাবরই তাদের দিকে থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষোভের ‘ফ্যাক্টর’।

    তথ্য যা মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এ বারের লোকসভা ভোটে শহর নিউ টাউন ১৫টি বুথে বিন্যস্ত ছিল। সব ক’টি বুথেই পরাজিত হয়েছে শাসকদল। নিউ টাউনের ওই ১৫টি বুথে বিজেপি পেয়েছে ৫৬০১টি ভোট, তৃণমূল পেয়েছে ২২০২টি ভোট। গত বিধানসভায় বিজেপির ব্যবধান ছিল ১০০০ ভোটের কাছাকাছি। সেই ব্যবধান এ বার বেড়ে হয়েছে ৩৩৯৯। অবশ্য নিউ টাউন বিধানসভা থেকে আনুমানিক ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার।

    বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনুপম ঘোষ বলেন, ‘‘জোর করে শহর
    নিউ টাউন এলাকাকে পঞ্চায়েতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। তা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ ছিলই। তার উপরে পঞ্চায়েতে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। দুইয়ে মিলে মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। পঞ্চায়েতের যে আটটি আসনে নিউ টাউন ভাগ করা হয়েছিল, সব ক’টিতে আমরা জিতেছি। ওই আটটি আসনের সদস্যদের ইস্তফা দেওয়া উচিত।’’

    উল্লেখ্য, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আচমকাই শহর নিউ টাউনকে জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া পঞ্চায়েতের অধীনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বাসিন্দারা। সেই সময়ে রাজ্য সরকার দাবি করেছিল, নিউ টাউনকে পঞ্চায়েত থেকে বার করে অদূর ভবিষ্যতে পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কারণ, ওই এলাকাকে পুরসভার অধীনে নেওয়ার মতো বাসিন্দা এখনও সেখানে বাস করেন না। যদিও বাসিন্দাদের মতে, সরকার চাইলে সল্টলেকের মতো পঞ্চায়েত থেকে জায়গা বার করে নিউ টাউনকেও পুরসভায় উন্নীত করতে পারে।

    লোকসভা ভোটের দিন সকালেও বুথের বাইরে এই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ শোনা গিয়েছিল ভোটারদের মুখে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যে ভাবে পুলিশের গার্ডরেল ফেলে ভোটারদের এ পি জে কলেজের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়েও লোকসভা ভোটের দিনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বাসিন্দারা। সেই ভোট না দিতে পারার প্রভাব যে লোকসভায় পড়তে পারে, তা আন্দাজ করে এ বার সেখানে ভোটের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মহিলাদের। কিন্তু তাতে যে ভোটারদের ক্ষোভ প্রশমিত করা যায়নি, লোকসভা ভোটের ফলাফলে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

    উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য তথা পঞ্চায়েত এলাকাগুলির দায়িত্বে থাকা মহম্মদ আফতাবউদ্দিনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘শহর নিউ টাউনে আমরা হেরেছি ঠিকই। হয়তো মানুষ কোনও কারণে আমাদের উপরে আস্থা রাখতে পারেননি। কেন তিন হাজার ভোট কমল, তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে অন্য পঞ্চায়েতগুলিতে আমরা অনেক ব্যবধানে জিতেছি।’’

    বিজেপির অভিযোগ, মঙ্গলবার ফল ঘোষণার পরে নিউ টাউন বিধানসভার অধীন বিধাননগর পুরসভার ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযোগ, সুমন হালদার নামে এক কর্মী ফল বেরোনোর পরে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে মারধর করা হয়। আবার বাঙুরে বিজেপি নেতা মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের গাড়ির চালকের বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)