• লক্ষ লক্ষ প্রাণ বাঁচাতে পৃথিবীকে বাঁচান
    আজকাল | ০৬ জুন ২০২৪
  • পর্ণী ব্যানার্জিতীব্র দাবদাহ রাজ্যে রাজ্যে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা পেরিয়ে গিয়েছে ৫০ ডিগ্রি। দিল্লি, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বাংলাসহ দেশের একাধিক জায়গায় যেন আগুনের হলকা বইছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, তীব্র দাবদাহে এবছর প্রায় ২৫ হাজার হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৬ জন। এই তীব্র দাবদাহে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কারা? বিদ্যা বেণুগোপাল, ডিরেক্টর, শ্রী রাম ইনস্টিটিউট অফ হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, চেন্নাই, বলছেন, এই তীব্র দাবহাহের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বয়স্কদের ওপর, শিশুদের ওপর, যাঁরা বাইরে কাজ করছেন, প্রভাব পড়বে তাঁদের ওপরও। হু'র অনুমান, ২০২৩-২০৫০ এর মধ্যে জলবায়ু সংকট, অপুষ্টি, বন্যাসহ একাধিক কারণে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাবেন। এই পরিস্থিতির কারণ কী? খাস কলকাতার অবস্থা কী? বিশ্ব পরিবেশ দিবসে, শহরের এক বর্ষীয়ান সাংবাদিক বললেন, অদূর ভবিষ্যতে মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য ভিক্টরিয়ার সামনের অন্তত ১৭০০ গাছ কেটে ফেলা হবে। স্বাভাবিক ভাবেই আরও গরম হবে আবহাওয়া। ড. ফ্রেড্রিক অটো, ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন, এবং ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন বলছেন এই তীব্র দাবদাহ কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়। আদতে এটা মানুষের তৈরি। তাঁর মতে, বিপুল পরিমাণ কয়লা, তেল, গ্যাস পোড়ানো, দিনে দিনে বন উজাড় করে দেওয়া, তার কারণেই জলবায়ুর এই পরিবর্তন। আর সেই কারণেই এই চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি ভারত। অর্থনীতিবিদ সুস্মিতা দাশগুপ্ত আবার সিমেন্টের সংমিশ্রণ এবং সিমেন্টের ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার দিনে দিনে কীভাবে পরিস্থিতি কঠিন করছে, তা নিয়ে জানালেন। তাঁর মতে, যদি এভাব তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে সেই দিন দূরে নয়, যখন তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রিতে পৌঁছবে। ড. অরুণ শর্মা, অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন এই পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকার কিছু জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, সরাসরি সূর্যালোকের ব্যবহার এড়াতে ছাতা, রোদ চশমার ব্যবহার করা দরকার। বারবার জল, ফলের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই রোদের মধ্যে সানস্ক্রিন ত্বকের খেয়াল রাখে, সেকথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। কী করনীয়?সুস্মিতা দাশগুপ্ত এই কঠিন পরিস্থিতিতে মনে করালেন এক পদক্ষেপের কথা। জানালেন, 'কলকাতা বিশ্বের একমাত্র শহর, যেখানে রাজ্য সরকার বাধ্যতামূলক করেছে, বাড়ি তৈরির সময় ২০ শতাংশ জমি ফাঁকা রাখতে হবে গাছ লাগানোর জন্য। এই সিদ্ধান্তের বয়স প্রায় দু' দশক। এটি পরিবেশ সুরক্ষায় সামঞ্জস্যপূর্ণ।' বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ১ জুন ২০২৪-এ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যাতে জানা গিয়েছিল, এই কঠিন পরিস্থিতির কারণ, স্বাস্থ্য তার প্রভাব এবং তা সমাধানের জন্য বিশ্বের স্বাস্থ্য নেতারা এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়েছিলেন। বাসবী সুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রশ্ন করছেন, এসবের জন্য কি আমরাই দায়ী নই? তাঁর প্রশ্ন, 'অতিরিক্ত আরামের জন্য বহুল পরিমাণে এয়ার কন্ডিশন, যানবাহনের ব্যবহারই কি দায়ী নয় পৃথিবীকে দিনে দিনে উত্তপ্ত করার জন্য?' আসলে সময় এসেছে উপলব্ধি করার, এলাকায় অন্তত একটি করে গাছ লাগালেও এড়াতে পারা যাবে সমস্যাকে। এছাড়া বায়ু এবং শব্দদূষণ ঘটায় এরকম যানবাহনের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব যানবাহনও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সবেশেষে, মনে রাখতে হবে পাহাড়, সমুদ্র, যত্রযত্র আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় বর্জ্য পদার্থ ফেলা আমাদের দায়িত্ব। সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই পুনরুদ্ধার করা যাবে পৃথিবীকে।
  • Link to this news (আজকাল)