গত লোকসভা ভোটে রামে যাওয়া ভোট এ বার ফেরার আশায় ছিল বামেরা। তার সঙ্গে দলীয় ভোট যোগ হবে মনে করে বড় ভোট টানায় প্রত্যাশী ছিলেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো। অন্যদিকে, আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রার্থী অজিত মাহাতোও কত ভোট পান, সেদিকেও নজর ছিল অনেকের। জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেছিলেন, বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক ভেঙে ওই দুই প্রার্থী ভাল ভোট টানলে আখেরে লাভের গুড় পেতে পারে তৃণমূল। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হল না। কেন হল না, তা নিয়েই চলছে চর্চা।
২০১৪-র লোকসভায় বিজেপি ৫.৮৬ শতাংশ ভোট পেলেও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে পদ্ম শিবিরের ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ শতাংশে। ২ লক্ষেরও বেশি ভোট ব্যবধানে জেতে বিজেপি। রাজনৈতির মহলের ব্যাখ্যা ছিল, বামের ভোট রামে গিয়েছে। কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কেও ধাক্কা দিয়েছিল গেরুয়া শিবির।
তাই কুড়মি সমাজের নেতা অজিত এবং বাম সমর্থিত বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতো ভোটে দাঁড়িয়ে বিজেপির ভোট কেটে তাদের বাড়া ভাতে ছাই ফেলতে পারেন বলে আশঙ্কা ছিল গেরুয়া শিবিরের একাংশের। নির্বাচনী প্রচারে ওই দুই প্রার্থীর নাম করে তাঁরা তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতে ভোটে লড়ছেন বলে মন্তব্যও করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কিন্তু ফল প্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে, প্রত্যাশা মতো ফল করতে পারেনি বাম-কংগ্রেস জোট। গত পঞ্চায়েত ভোটে এই দুই দলের সম্মিলিত যে ভোট ছিল তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি।
গত পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়া লোকসভা আসনে বামেদের ভোট ছিল (ফরওয়ার্ড ব্লক সমেত) ১,৬৬,৪২৪। কংগ্রেসের ভোট ছিল ৮৮,৪৮৩। সম্মিলিত ভোটের পরিমাণ ২,৫৪,৯০৭। এ বার বাম-কংগ্রেসের সম্মিলিত ভোট ১,২৯,১৫৭ (৯.০১ শতাংশ)। পৃথক ভাবে লড়ে ফব ভোট পেয়েছে ১৪,৫৭২।
কেন এই ফল? বাম-কংগ্রেস প্রার্থী নেপালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রচারে যে ভাবে সাড়া পেয়েছিলাম, ইভিএমে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করব।’’ পুরুলিয়া কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয়বার সাংসদ হতে চলা বিজেপির জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর দাবি, ‘‘গত লোকসভা ভোটে বামেদের ভোট আমাদের পক্ষে গিয়েছিল ঠিকই। পরে নিচুতলার বাম কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই এখন আমাদের কার্যকর্তা হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা গত বিধানসভায় এবং এ বারও আমাদেরই ভোট দিয়েছেন।’’
আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রচারেও ভিড় দেখা গিয়েছিল গ্রামে-গঞ্জে। বাম-কংগ্রেস না কি আদিবাসী কুড়মি সমাজ— কে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে, আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সেটাও।
কারণ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিভিন্ন ব্লকে কুড়মি আন্দোলনের সমর্থক নির্দল প্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল সমাজ। পঞ্চায়েতে পুরুলিয়া লোকসভা আসনে ৬৮ হাজারেরও বেশি ভোট পান তাঁরা। তাই অজিতের বাক্সে কত ভোট পড়ে, সেদিকে নজর ছিল। অজিত পান ৯৮,৬৫৮ (৬.৮৮ শতাংশ)। অজিতের কথায়, ‘‘আমরা আরও বেশি ভোট প্রত্যাশা করেছিলাম। কেন তা হল না, তা পর্যালোচনা করা হবে।’’
জেলার রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, অজিত প্রায় একলক্ষ ভোট পেলেও বাম-কংগ্রেস প্রত্যাশা মাফিক তাঁদের পঞ্চায়েতে পাওয়া ভোটের ধারে কাছে না পৌঁছনোয় আশাভঙ্গ হয়েছে ঘাসফুল শিবিরের। গত পঞ্চায়েত ভোটের চেয়ে সওয়া এক লক্ষের বেশি ভোট তাঁদের বাক্সে ফেরেনি। তাই গত লোকসভার চেয়ে তৃণমূল (৪,৬৩,৩৭৫) এ বারে নিজেদের ভোট বাড়ালেও (৫,৬১,৪১০), বিজেপিকে (৫,৭৮,৪৮৯) টপকে যেতে পারেনি।
তবে তৃণমূলের পুরুলিয়া কেন্দ্রের নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কে কার ভোট কেটে কাকে সুবিধা করে দেবে, তা নিয়ে তৃণমূল ভাবে না। আমরা সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকি। মানুষের ভোটে পুরুলিয়া জেলায় আমরা ন’টির মধ্যে ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এগিয়ে গিয়েছি।’’