লোকসভা ভোটে খুব বড় প্রভাব নেই বকেয়া ডিএ’র, পোস্টাল ব্যালটে রাজ্যের ২৬ কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূলই
আনন্দবাজার | ০৭ জুন ২০২৪
মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ‘ক্ষোভের আঁচ’ সে ভাবে পাওয়া গেল না লোকসভা ভোটের ফলাফলে। বরং মোট ৪২টি আসনের মধ্যে ২৬টি লোকসভা কেন্দ্রেই পোস্টাল ব্যালটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। বাকি ১৬টিতে জিতেছে বিজেপি। রাজ্যে প্রান্তিক রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হলেও এখনও সিপিএমের কো-অর্ডিনেশন কমিটির ‘দাপট’ রয়েছে সরকারি কর্মচারী মহলে। কিন্তু বাম-কংগ্রেস জোটের কেউই পোস্টাল ব্যালটে জিততে পারেননি।
এই ফলাফলের সূত্রেই তৃণমূলের অনুসারী সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের দাবি, রাজ্যের সিংহভাগ সরকারি কর্মচারীর সমর্থন রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই। কিন্তু এই ফলাফল নিয়ে ধন্দও তৈরি হয়েছে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির অন্দরে।
বড়দিন উপলক্ষে গত বছর ২১ ডিসেম্বর কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ৪ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ওই ঘোষণা কার্যকর হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। ঘোষণার পরে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেয় নবান্ন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ দফতরের তরফে ওই বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয় সরকারি কর্মচারী, সরকার অনুমোদিত শিক্ষাঙ্গনের কর্মচারী, স্বশাসিত সংস্থা, সরকার অধীনস্থ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত কর্মী, পুরনিগম, পুরসভা, স্থানীয় বোর্ড এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের পেনশন প্রাপকেরা এই সুবিধা পাবেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, রাজ্যপাল সব দিক খতিয়ে দেখে ডিএ দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন।
ডিএ বৃদ্ধি করায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার ফারাক কমে হয় ৩৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা বর্তমানে ৪৬ শতাংশ ডিএ পান। ঘোষণার সময়ে এ বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য ফারাক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ডিএ বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে তা নয়। রাজ্যে ডিএ ঐচ্ছিক।’’
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ফলে সরকারের ২,৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়েছে। এতে উপকৃত হবেন রাজ্যের ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মী।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরেও সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নগুলি প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, পুরোপুরি না-হলেও সরকারি কর্মচারীদের সমর্থন তৃণমূলের দিকেই বেশি গিয়েছে। কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘পোস্টাল ব্যালটের বড় অংশের ভোট যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের বয়স আশির বেশি। আবার এমন অনেক সরকারি কর্মচারী আছেন, যাঁরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেননি। আবার এমন সরকারি কর্মচারীও আছেন, যাঁরা মেরুকরণের ভোটে প্রভাবিত হয়েছেন। তাই পোস্টাল ব্যালটে কেবলমাত্র তৃণমূল এবং বিজেপিই জিতেছে।’’ তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা প্রতাপ নায়েকের বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি কর্মচারী দরদি। ডিএ নিয়মিত বাড়াচ্ছেন, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতনও বৃদ্ধি করছেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি আমাদের পাশে থাকছেন। তাই এ বার ২৬টি লোকসভা কেন্দ্রেই সরকারি কর্মচারীরা তাঁর প্রতি আস্থা রেখেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যে সব আসনে বিজেপি জয় পেয়েছে, আগামী বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে সেই সব আসনেও সরকারি কর্মচারীরা তৃণমূলের পক্ষেই ভোট দেবেন।’’ পোস্টাল ব্যালটে ভোটের ফলাফল নিয়ে বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, বামপন্থীদের এত বড় শিক্ষক ও কর্মচারী সংগঠন আছে। কিন্তু ভোটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। কোথাও জোট প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান নিতে পারেনি। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, কর্মস্থলে বামপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলেও অনেকে ভোট দেওয়ার সময় হয় বিজেপি, নয় তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। এটাকেই সুবিধাবাদ বলে!’’