লোকসভা ভোটে তৃণমূল এবং বিজেপি বাংলার অনেকগুলি কেন্দ্রেই দলীয় বিধায়কদের প্রার্থী করেছিল। তাঁদের অনেকে লোকসভা ভোটে জিতেছেন, অনেকে হেরেওছেন। সেই তালিকা মেলালে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ১০টি বিধানসভায় উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী। তার মধ্যে যেমন রয়েছে লোকসভায় জয়ীদের বিধানসভা, তেমনই রয়েছে লোকসভায় পরাজিত হওয়া বিধায়কদের বিধানসভাও।
কোচবিহার লোকসভায় তৃণমূলের হয়ে জিতেছেন জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া। তিনি হারিয়েছেন অমিত শাহের ‘ডেপুটি’ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে। জগদীশ সিতাইয়ের বিধায়ক। সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে তাঁকে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। ফলে সিতাই বিধানসভায় উপনির্বাচন হবে। তেমনই এই তালিকায় রয়েছে মাদারিহাট। আলিপুরদুয়ারের এই বিধানসভার বিধায়ক বিজেপির মনোজ টিগ্গা। তিনি লোকসভায় জিতেছেন। ফলে মাদারিহাটেও উপনির্বাচন হবে। ব্যারাকপুর লোকসভায় তৃণমূলের হয়ে জয়ী রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককেও নৈহাটি বিধানসভার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। ফলে সেখানেও উপনির্বাচন হবে। একই ভাবে বাঁকুড়ার তালড্যাংড়া, মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ছ’মাসের মধ্যে। তালড্যাংড়ার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী। তিনি লোকসভায় বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন। পরাস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারকে। মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়াও মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছেন। আবার হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম জিতেছেন বসিরহাটে। ফলে হাড়োয়াতেও উপনির্বাচন হবে। প্রসঙ্গত, নুকুল ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত বসিরহাটেরই সাংসদ ছিলেন।
উপনির্বাচন হবে লোকসভায় পরাজিত তিন বিধায়কের বিধানসভা কেন্দ্রে। সেই কেন্দ্রগুলি হল বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ এবং রায়গঞ্জ। এই তিনটি বিধানসভাতেই ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জিতেছিল বিজেপি। সেই বিজেপি বিধায়কেরাই তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদের এই লোকসভা ভোটে প্রার্থী করেছিল জোড়াফুল শিবির। যে হেতু তাঁরা দলবদল করে লোকসভায় প্রার্থী হয়েছেন, তাই তাঁদের আগেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। ফলে কৃষ্ণ কল্যাণীর রায়গঞ্জ, বিশ্বজিৎ দাসের বাগদা এবং মুকুটমণি অধিকারীর রানাঘাট দক্ষিণে উপনির্বাচন হবে। এখন দেখার, ওই উপনির্বাচনে আবার তাঁদেরই তৃণমূল টিকিট দেয় কি না। টিকিট দিলে এবং উপনির্বাচনে জিতলে তাঁরা আবার নিজ নিজ কেন্দ্রেই বিধায়ক হতে পারবেন। শুধু বিজেপির বদলে তৃণমূলের টিকিটে।
উল্লিখিত ন’টি বিধানসভার সঙ্গে যুক্ত হবে কলকাতার মানিকতলা। সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পরে মানিকতলা বিধায়কহীন হয়ে রয়েছে। বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবের করা মামলার জন্য উপনির্বাচন আটকে ছিল। কল্যাণের অভিযোগ ছিল, ২০২১ সালের ভোটগণনায় কারচুপি হয়েছিল। কল্যাণের সেই মামলা সম্প্রতি আদালত খারিজ করে দিয়েছে। ফলে মানিকতলায় ভোট হতে আর কোনও আইনি জটিলতা নেই।
সম্ভাব্য উপনির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। ঘনিষ্ঠ বৃত্তের আলোচনায় অনেক নেতা প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা গোপনও করছেন না। হারের ধাক্কার পর বিজেপিতে অবশ্য এ সব নিয়ে এখনও তেমন কোনও আলোচনা নেই। আর বাম-কংগ্রেস নেতারা ভোট শুনলেই কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন। খাতায়কলমে এই ১০টি বিধানসভার মধ্যে চারটি বিধানসভা ২০২১ সালে ছিল বিজেপির দখলে। সেগুলি পদ্মশিবির ধরে রাখতে পারে কি না সেটাই দেখার।