বাতিল বহু ট্রেন, উপচে পড়া ভিড় স্টেশনগুলিতে, শিয়ালদহ মেন এবং বনগাঁ শাখায় যাত্রীভোগান্তি চরমে
আনন্দবাজার | ০৭ জুন ২০২৪
শিয়ালদহ স্টেশনের মেন এবং বনগাঁ শাখায় প্রায় ৯০টি ট্রেন বাতিল হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে নিত্যযাত্রীরা। শুক্রবার অফিসের ব্যস্ত সময়ে ট্রেন বাতিল হওয়ায়, সময় মতো ট্রেন না চলায় প্রতিটি স্টেশনে উপচে পড়ছে নিত্যযাত্রীদের ভিড়। ট্রেন এলেও সেগুলিতে বাদুড়ঝোলা ভিড়। ফলে ভিড়ের চাপে অনেকেই ট্রেনে উঠতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তাই গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, কোন কোন ট্রেন বাতিল হয়েছে এবং কোন ট্রেনের যাত্রাপথ বদলেছে, তা কর্তৃপক্ষের তরফে ঠিক ভাবে জানানো হয়নি বলেই হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, ভিড়ের চাপে চলন্ত ট্রেন থেকে এক যাত্রী পড়েও গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বেশ কিছু নিত্যযাত্রী । প্রত্যক্ষদর্শী অলোক পাত্রের বিবরণ অনুযায়ী, ‘‘টিটাগড় এবং খড়দহের মাঝখানে দেখলাম ট্রেনের দরজায় ঝুলতে থাকা কমবয়সি একটি ছেলে লাইনে পড়ে গেল। ছেলেটার কী হল বুঝতে পারছি না। ভয়ঙ্কর অবস্থা।’’ নৈহাটি, কল্যাণী, ব্যারাকপুর, রানাঘাট, শান্তিপুর, বনগাঁ, হাসনাবাদ শাখার যাত্রীরা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।
মধ্যমগ্রাম স্টেশনে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে সরস্বতী মৈত্র নামে এক যাত্রীকে। তাঁর কথায়, “ট্রেন বাতিল, সময় মতো কিছু ট্রেন না আসায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। স্টেশনে গিয়ে দেখি ট্রেনের জন্য কাতারে কাতারে মানুষ অপেক্ষা করছে। ঠেলে সামনের দিকে যাওয়ার উপায় নেই। একটি ট্রেন এল। কেউ উঠতে পারলেন, কেউ পারলেন না। আমি তো ট্রেনের কাছেই পৌঁছতে পারিনি ভিড়ের জন্য! প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে অফিসে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।”
শুক্রবার সকাল থেকেই শিয়ালদহ মেন এবং উত্তর শাখায় অনেক ট্রেন চলছে না। যে ট্রেনগুলি চলছে, সেগুলির সব ক’টি আবার শিয়ালদহ স্টেশনে ঢুকছে না। অনেক ট্রেন দমদম পর্যন্ত আসছে। দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনেও থেমে যাচ্ছে বহু ট্রেন। এক একটি স্টেশনে ট্রেন আসছে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর পর। সেই ট্রেনগুলিতেও তিলধারণের জায়গা নেই। ফলে অনেকেই উঠতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুলে ঝুলেই যাচ্ছেন।
শহরতলির লোকাল ট্রেনের যাত্রিধারণ পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার দুপুর ২টো পর্যন্ত শিয়ালদহ স্টেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে বহু ট্রেনই শিয়ালদহ থেকে যাতায়াত করবে না বলেও জানানো হয়েছিল রেলের তরফে। অনেক ট্রেন বাতিলও করা হয়েছে। যাত্রাপথ বদলেছে বেশ কিছু ট্রেনেরও। কিন্তু কোন কোন ট্রেন বাতিল হয়েছে এবং কোন কোন ট্রেনের যাত্রাপথ বদলেছে, সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা। ফলে তাঁদের মধ্যে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। আর তার জেরে শুক্রবার সকাল থেকেই নাজেহাল অবস্থা নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ যাত্রীদের।
মধ্যমগ্রাম থেকে প্রতি দিন শিয়ালদহ আসেন নিত্যযাত্রী শ্রীলেখা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বেশির ভাগ ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ৮টা ১১ মিনিটে একটি ট্রেন এসেছিল। তার পরে মাঝেরহাট লোকাল এল, তখন প্রায় ৯টা। ট্রেনে এত ভিড় যে আমি চেষ্টা করেও উঠতে পারিনি। তার পর হাসনাবাদ-শিয়ালদহ লোকাল এল। তা-ও অনেক পরে। সেটাতেও এত ভিড় ছিল যে, বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’’
অন্য এক নিত্যযাত্রী সুখেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘ট্রেনের অবস্থা খুব খারাপ। ঘণ্টায় একটা করে ট্রেন আসছে। সব স্টেশনে হাজার হাজার লোক। এটা হতে পারে! রেলের তরফে জানানো হয়েছিল, ৯০টার মতো ট্রেন চলবে না। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এর থেকে অনেক বেশি ট্রেন বাতিল হয়েছে। রেলের তরফে আগে থেকে সবটা জানানো উচিত ছিল। তা হলে এমন ভোগান্তি হত না।’’
যদিও এই প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন,‘‘১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কাজ চলছে। ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক। আমরা যে কাজ করছি তার জন্য কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত। পাঁচ মিনিটের বদলে হয়তো ১০-১৫ মিনিট ছাড়া ট্রেন আসছে। কিন্তু এমন হইচই তৈরি হয়েছে, মনে হচ্ছে সব ট্রেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তেমনটা কিন্তু হয়নি।’’
উল্লেখ্য, শিয়ালদহ স্টেশনে কাজ চলাকালীন শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে এমন চারটি দূরপাল্লার ট্রেন— শিয়ালদহ-অজমের সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, হাটে-বাজারে এক্সপ্রেস, শিয়ালদহ-বালুরঘাট এক্সপ্রেস এবং শিয়ালদহ-আসানসোল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস কলকাতা স্টেশন থেকে চলবে। রাজধানী ও দুরন্ত-সহ অন্যান্য দূরপাল্লার ট্রেন নির্ধারিত সময়েই চলবে।