• রাজারহাটের কাছে বাজ পড়ে মৃত ২ কিশোর
    আনন্দবাজার | ০৭ জুন ২০২৪
  • ঝড়বৃষ্টির সময়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হল দুই কিশোরের। আহত আরও তিন জন। বৃহস্পতিবার কলকাতার উপকণ্ঠে রাজারহাটের কাছে নারায়ণপুর বেড়াবেড়ির ঘটনা। পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন বিকেলে ওই কিশোরেরা ফুটবল খেলতে মাঠে গিয়েছিল। সে সময়ে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতে মৃত্যু হয় জামির হোসেন (১৮) এবং সফিকুল ইসলাম (১৭) নামে দু’জনের। দু’জনেই পূর্ব বেড়াবেড়ির বাসিন্দা।

    আহতদের মধ্যে সানোয়ার হোসেন নামে বছর ষোলোর এক কিশোরকে রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে হাসপাতালের খবর। বাকি দু’জনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।

    এ দিন পূর্ব বেড়াবেড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার আকস্মিকতায় গোটা তল্লাট কার্যত স্তব্ধ। পরিবারের ছোট ছেলে জামির ব্যাগ তৈরি কারখানার শ্রমিক ছিলেন। আর সফিকুল স্থানীয় একটি স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র। আগামী বছর মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল। তাঁর বাবা আব্দুল রফিক জানান, আর পাঁচ দিনের মতোই খেলতে গিয়েছিল তাঁর ছেলে। মুষলধারে বৃষ্টি নামে, শুরু হয় বাজ পড়া। তাতেই এই বিপর্যয়। বজ্রাঘাতে আহত কিশোর ফারহান আলি বলে, ‘‘আমরা গাছের তলায় দাঁড়িয়েছিলাম। তখনই বিকট আওয়াজ। আর কিছু মনে নেই। এখন ডান পা তুলতে পারছি না।’’

    মৃতদের পরিবার সূত্রের খবর, তাঁরা মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করাতে চাননি। সে কথা পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। রাতে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা প্রশাসনিক নিয়ম মেনে সরকারি ক্ষতিপূরণ পেতেন। কিন্তু তা ওঁরা চাননি। অন্য কোনও ভাবে সাহায্য করা গেলে তা করা হবে।’’

    আহত সানোয়ারও রাজারহাটের একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। এ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে সে বলে, ‘‘মাঠে ফুটবল খেলার সময় হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামে। খেলা ছেড়ে বাড়ি ফিরছিলাম। সে সময় খুব জোরে বিদ্যুৎ ঝলসে ওঠে। বসে পড়ি। ফের যখন হাঁটতে যাই, বাঁ পায়ে ব্যথা শুরু হয়। মাঠেই পড়ে যাই।’’ তার বাবা ডাবলু হোসেন বলেন, ‘‘সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পাড়ার লোকেরা বাড়িতে এসে খবর দেন, বিদ্যুৎ চমকানোর পরে ছেলেরা ভয়ে পড়ে গিয়েছে। আমরা মাঠ থেকে জখম সানোয়ার এবং তার এক বন্ধুকে নিয়ে রাজারহাটের একটি হাসপাতালে যাই।’’ অন্য ছেলেটিকে রাজারহাটের হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।

    হাওয়া অফিসের খবর, মধ্যপ্রদেশ থেকে গাঙ্গেয় বঙ্গ পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। তার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প দক্ষিণবঙ্গে ঢুকছে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় সেই জলীয় বাষ্প আরও গরম হয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে উঠেছে এবং সেখানে কম তাপমাত্রায় দ্রুত ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করেছে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হওয়া এমন মেঘপুঞ্জ থেকেই এ দিন গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। খাস কলকাতায় বৃষ্টি এবং বজ্রপাত না হলেও পূর্ব কলকাতা লাগোয়া রাজারহাট, সল্টলেক, দমদমে বৃষ্টি হয়েছে এবং বাজ পড়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)