• সৌরভে মুগ্ধ, ঐতিহাসিক জয়ের পর হরমীতকে শুভেচ্ছাবার্তা ছোটবেলার কোচের...
    আজকাল | ০৮ জুন ২০২৪
  • সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মার্কিন মুলুকে উত্থান হয়েছে আরও এক সৌরভের। ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগেই এক ভারতীয়ের দম্ভে চূর্ণ বিচূর্ণ পাকিস্তান। তিনি সৌরভ নেত্রাভালকার। ১৪ বছর আগে ক্রাইস্টচার্চে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। ভারতের জার্সিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ২ উইকেটে জিতেছিল পাকিস্তান। বাবর আজম ছিলেন সেই দলে। এবার যেন বনবাস কাটল। ১৪ বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে বাবরের দলকেই হারালেন সৌরভ। তবে এবার অন্য দেশের জার্সিতে। সুপার ওভারে বল করার দায়িত্ব পান। ১৮ রান ডিফেন্ড করে আমেরিকার সুপার এইটে যাওয়ার সম্ভবনা উজ্জ্বল করেন। সেটা হলে অফিসে ছুটি বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে হবে আমেরিকার বিশ্বকাপারকে। বাকিদের মতো তিনিও ভাবেননি দল পরবর্তী পর্বে যেতে পারে। তাই ১৭ জুন পর্যন্ত ছুটি নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছেন ৩২ বছরের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কেএল রাহুল, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, জয়দেব উনাদকাতের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা সৌরভ কীভাবে আমেরিকার বিশ্বকাপ দলে? পড়াশোনার জন্যই বিলেতে পাড়ি মুম্বইকরের। তাঁকে ছোটবেলা থেকেই চেনেন দীনেশ লাড। যিনি রোহিত শর্মার বাল্যবেলার কোচ। পরিবারের সঙ্গে মালাডে থাকতেন সৌরভ। পরে বোরিভালিতে শিফট করেন। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। তাঁকে বোরিভালির ঘোড়াইয়ের স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করানো নিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে কথাও হয় রোহিতের কোচের। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি পড়াশোনায় তুখোড় ছিলেন। বোর্ডের পরীক্ষায় দুর্দান্ত রেজাল্ট করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখান থেকেই শুরু ভাগ্য লিখন। সৌরভের সাফল্যে উৎফুল্ল দীনেশ লাড। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে থেকে প্রতিটা বল দেখেছেন রোহিতের কোচ। আমেরিকার জয়ে সৌরভের অবদানে আনন্দ চেপে রাখতে পারছেন না। ফোনে দীনেশ বলেন, 'দুর্দান্ত জয়। আমি পুরো ম্যাচ দেখেছি। একটা বলও মিস করিনি। ভাবতে পারিনি আমেরিকা পাকিস্তানকে হারিয়ে দেবে। তারওপর দুই ভারতীয় নেত্রাভালকার এবং হরমীত অবদান রেখেছে। আমি খুবই গর্বিত। দু'জনেই ভারতীয়, এবং মুম্বইয়ের। তাই আরও ভাল লাগছে। হরমীত আমার ছাত্র ছিল। সৌরভকেও ছোট থেকে চিনি। ওর বাবার সঙ্গে এখনও আমার খুব ভাল সম্পর্ক। ওরা মালাড থেকে বোরিভালিতে চলে আসার পর আমার স্কুলে ভর্তি করানো নিয়ে কথা হয়েছিল। বরাবরই নেত্রাভালকার পড়াশোনায় ভাল। দশম স্ট্যান্ডার্ডে ৯২ শতাংশ পেয়েছিল। দ্বাদশ শ্রেণীতে ৯৪ শতাংশ পায়। তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আমেরিকায় যায়। তার আগে অনূর্ধ্ব-১৯ মুম্বই, ভারতের হয়েও খেলেছে সৌরভ। ওদের সাফল্যে আমি গর্ববোধ করছি।' টি-২০ বিশ্বকাপে আমেরিকা দলে তাঁর আরও একজন ছাত্র রয়েছে। তিনি হরমীত সিং। বোরিভালির স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে সাত বছর দীনেশ লাডের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ১২ বছর বয়সে সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন রোহিতের প্রাক্তন কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। চার মাস আগে মুম্বইয়ে এসেছিলেন হরমীত। বোরিভালিতে ছোটবেলার কোচ দীনেশ লাডের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন। আমেরিকা ইতিহাস সৃষ্টি করার পর ছাত্রকে মেসেজ পাঠিয়ে অভিনন্দন জানান। দীনেশ বলেন, 'চার মাস আগে আমার বাড়িতে এসেছিল হরমীত‌।‌ তবে ক্রিকেট নিয়ে সেইভাবে কোনও কথা হয়নি। আমেরিকা জেতার পর ফোনে আমার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। টুর্নামেন্ট চলাকালীন আমি কাউকে বিরক্ত করতে পছন্দ করি না। তবে আমি মোবাইলে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছি।' টি-২০ বিশ্বকাপে এক অনন্য নজির গড়ে ফেলেছেন দীনেশ লাড। তিনিই একমাত্র কোচ যার দুই শিষ্য খেলছে দুই দেশের হয়ে। ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোহিত শর্মা, অন্যদিকে আমেরিকার অন্যতম স্পিন অস্ত্র হরমীত সিং। এরকম রেকর্ড ক'জনেরই বা থাকে! 
  • Link to this news (আজকাল)