পাঁচ বছর পর আবার হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে ‘হুগলি নম্বর ওয়ান’ তারকা প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চুঁচুড়া বিধানসভার একের পর এক পঞ্চায়েত প্রধান এবং উপপ্রধান পদত্যাগ করলেন। তাঁদের অভিযোগ, চুঁচুড়া বিধানসভায় রচনা ভোট কম পেয়েছেন বলে ওই বিধানসভার বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে ‘গরু-ছাগলের’ মতো ব্যবহার করেছেন। অন্য দিকে, বিধায়ক অসিত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘ওঁদের বিবেক আছে বলেই পদত্যাগ করেছেন।’’ সব মিলিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে চুঁচুড়া তৃণমূলের অন্দরে চাপানউতর চলছে।
হুগলি লোকসভায় রচনা জিতেছেন ৭৬৮৫৩ ভোটে। কিন্তু, সাতটি বিধানসভার মধ্যে তিনটিতে পরাজয় হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে হার হয়েছে চুঁচুড়া বিধানসভায়। সেখানে বিজেপির লকেট রচনার চেয়ে ৮২৮৪টি বেশি ভোট পেয়েছেন। তাই দলীয় প্রার্থী জিতলেও চুঁচুড়ার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি সে ভাবে। হারের কারণ পর্যালোচনা করতে ফলের অব্যবহিত পরেই বৈঠকে বসেন চুঁচুড়ার তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই বিধানসভার ব্যান্ডেল, দেবানন্দপুর, কোদালিয়া-১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য এবং চুঁচুড়া পুরসভার দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূল বিধায়ক অসিত। তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, সেখানে বিধায়ক তীব্র ভর্ৎসনা করেন প্রধান, উপপ্রধান এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিকে। কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, তাঁদের যা নয় তাই বলে অপমান করেছেন বিধায়ক। তার পরেই সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলির প্রধান এবং উপপ্রধানেরা মগরা বিডিও অফিসে গিয়ে পদত্যাগ করেন। কোদালিয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুচেতা মান্না পাল অবশ্য জানান, তাঁদের উপর কোনও চাপ ছিল না। তবে দলের পরাজয়ের দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন। আবার চুঁচুড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ঝন্টু বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘মানুষের সঙ্গে, বিশেষ করে দলের কর্মী থেকে কাউন্সিলরদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের ফল এটা। কাউন্সিলরদের সঙ্গে কুকুর-ছাগলের মতো ব্যবহার করেন বিধায়ক। তাই মানুষ মুখ ফিরিয়েছেন। তাই এই পরাজয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এ ভাবে দল চালালে এক দিন তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়বে সংগঠন।’’ আর বিধায়কের দাবি, চারটি পঞ্চায়েতের প্রধান এবং উপপ্রধান পদত্যাগ করেছেন। তিনি তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘ওঁদের বিবেক আছে। ওঁরা থাকা অবস্থায় দলের পরাজয় হয়েছে। মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। কেন দিয়েছেন, তা নিয়ে বসে পর্যালোচনা করব আমরা।’’
‘সেলেব সাংসদ কী কাজ করে দেখুন’, হুগলির ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ জানালেন, দই উপহার দেবেন লকেটকে তৃণমূলের অন্দরে এই পদক্ষেপ এবং ঘটনা নিয়ে বিজেপি নেতা সুরেশ সাউ বলেন, ‘‘পরাজয়ের দায় যদি নিতেই হয় তা হলে বিধায়ক কেন নিচ্ছেন না? তিনিই তো চুঁচুড়ার অভিভাবক।’’