নাগরিক পরিষেবায় অবহেলার অভিযোগেই কি এ বারের লোকসভা ভোটে বালুরঘাট শহরে তৃণমূলের খারাপ ফল? শহরে দলের হারের পেছনে এই অভিযোগে তৃণমূলের একাংশে চর্চা শুরু হয়েছে। দলের কিছু পুর-প্রতিনিধি ও তৃণমূল নেতার দাবি, পুর কর্তৃপক্ষ রাস্তা মেরামতি, নিকাশির উন্নতি, বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহ ও পার্কিংয়ের মতো ন্যূনতম পরিষেবায় গুরুত্ব দেওয়ার চেয়ে, কলকাতায় ভবন সংস্কার, সৌন্দর্যায়নের মতো প্রকল্পে কোটি টাকা খরচে উৎসাহ বেশি।
যদিও অভিযোগ মানতে চাননি পুরপ্রধান অশোক মিত্র। তাঁর দাবি, ‘‘নাগরিক পরিষেবায় ঘাটতি নেই। সব ওয়ার্ডে হারলেও, শহরে ভোটের হার তিন শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিজেপির বেড়েছে এক শতাংশ।’’ পুর পরিষেবায় নাগরিকদের আস্থা রয়েছে বলেই শহরে বিজেপির চেয়ে তৃণমূল বেশি ভোট পেয়েছে বলে অশোক দাবি করেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বালুরঘাটে কেন্দ্রে হারের কারণ খুঁজতে শীঘ্রই তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থার একটি দল জেলায় আসছে। দলের জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল বলেন, ‘‘দলের তরফেও বালুরঘাটে হারের কারণ খতিয়ে দেখা হবে। বিধানসভার পরে লোকসভা ভোট। বার বার কেন বালুরঘাট শহরে আমরা 'পিছিয়ে' থাকছি! পরিষেবার কাজে ঘাটতি আছে কি না, দেখা হবে।’’
প্রাক্তন পুর-প্রধান আরএসপির সুচেতা বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন, ‘‘ভোটের আগে কলকাতার সল্টলেকে ‘বালুরঘাট ভবন’ সারাতে ও সাজাতে ৯০ লক্ষ টাকার বেশি খরচ ধরে পুরসভার করা টেন্ডার ও ঠিকাদারকে বরাত দেওয়া নিয়ে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। জেলাশাসকের তরফে বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষের হেলদোল দেখা যায়নি।’’ ওই টাকায় কলকাতায় অতিথিশালা তৈরি হয়ে যেত বলে সুচেতা দাবি করেন। শহরের বাসস্ট্যান্ডের ট্রাফিক মোড়ে বসানো স্বয়ংক্রিয় ঘড়িটি একাধিক বার সংস্কারে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয় বলে অভিযোগ। রঘুনাথপুরে স্মারক সেনা-ট্যাঙ্কের সৌন্দর্যায়নে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ ধরে পুর কর্তৃপক্ষ কাজে তৎপরতা দেখালেও, শহরে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কার, শহর জুড়ে বেহাল রাস্তা মেরামতি, প্রায় এক বছর ধরে বিকল হয়ে থাকা শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি মেরামতিতে তৎপরতা নেই বলে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। পুরপ্রধান অশোক মিত্র অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বলেছেন, ‘‘নিয়ম মেনেই সব কাজ হচ্ছে।’’
তৃণমূল পরিচালিত বালুরঘাট পুরসভার সব ওয়ার্ডেই বিজেপির চেয়ে কয়েক’শো ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। শুধু বালুরঘাট শহরের ২৫টি ওয়ার্ড থেকেই বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার ৪২ হাজারের বেশি ভোটের ‘লিড’ পেয়েছেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ বারে বালুরঘাট শহরে ভোট পরিচালনার অন্যতম প্রধান দায়িত্বে ছিলেন, দলের প্রার্থী বিপ্লব মিত্রের অনুগামী পুরপ্রধান অশোক মিত্র। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, ভোটে ‘লিড’ দিতে না পারা নেতাদের ‘পদ থেকে সরিয়ে’ দেওয়া হবে বলে দলের সেনাপতি তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন। বালুরঘাট শহরের ক্ষেত্রে 'সেনাপতির দাওয়াই' কি কার্যকর হবে? চর্চা চলছে দলের একাংশ নেতা কর্মীর মধ্যে।