আসন কমলেও, প্রায় অক্ষত রয়েছে দলের ভোটব্যাঙ্ক। উল্টে পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে যত সংখ্যক বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছিল, তার চেয়ে বেশি বিধানসভা কেন্দ্রে এ বারের লোকসভায় এগিয়ে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। এই আবহে নিজস্ব ভোটব্যাঙ্কের পাশাপাশি ৪-৫ শতাংশ বাড়তি ভোট দলের পক্ষে আনার মধ্যেই রাজ্যে পালাবদলের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে বলে মত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। আপাতত দু’বছর পরের বিধানসভা ভোটের আগে ওই বাড়তি ভোট জোগাড় করাই বিজেপির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলছেন, অত্যাচার-সন্ত্রাস সত্ত্বেও ৩৮-৪০ শতাংশ ভোটার বিজেপিকে ধারাবাহিক ভাবে সমর্থন করে যাচ্ছেন। সেই কারণে আগামী দিনে ভাল ফলের বিষয়ে তাঁরা প্রত্যয়ী।
পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে প্রথম বার তৃণমূল কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে মোট ছ’টি আসন হারিয়েছে। তার জন্য ঘুরিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের সাংসদদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি আজ দিল্লিতে দাবি করেছেন, ‘‘অনেক সাংসদ নিজের নিজের এলাকায় যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। জিততে হলে কেন্দ্রে পাঁচ বছর পড়ে থাকতে হয়। কিন্তু যাঁরা করেননি, তাঁরা খেসারত দিচ্ছেন।’’ আসন কমলেও, সার্বিক ভাবে রাজ্যে দলের ফল খারাপ হয়েছে বলে মানতে চাননি তিনি। সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দল ৭৭টি আসন পেয়েছিল। আর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে প্রায় একশোটির কাছাকাছি বিধানসভা আসনে দলীয় প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাড়তি ওই আসনগুলির জয় গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপিকে কিছুটা সময় দিতে হবে। তবেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে।’’
লোকসভা নির্বাচনে ২৯টি আসন জিতেও রাজ্যের মোট ভোটের ৪৫.৭৬ শতাংশ পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে বিজেপি মাত্র ১২টি আসন জিতে ভোট পেয়েছে ৩৮.৭৩ শতাংশ। যার অর্থ, বিজেপির থেকে মাত্র সাত শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে বিজেপি। গত তিনটি নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান পাঁচ থেকে আট শতাংশ। যদি এ বারের লোকসভার কথা ধরি, তা হলে যে সাত শতাংশের ব্যবধান রয়েছে, বিজেপি যদি কেবল চার-পাঁচ শতাংশ ভোট বাড়াতে পারে, তা হলেই তৃণমূলকে টপকে যাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে বাংলার প্রধান দু’টি দল হল তৃণমূল ও বিজেপি। তাই বিজেপির যদি চার শতাংশ ভোট বাড়ে, তা হলে উল্টো দিকে তৃণমূলের চার শতাংশ ভোট কমে গিয়ে ব্যবধান শূন্যতে নেমে আসবে।’’
দু’বছর পরে, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। আপাতত ওই ভোটের আগে চার থেকে পাঁচ শতাংশ ভোট বৃদ্ধির লক্ষ্য রাজ্য বিজেপির সামনে বেঁধে দিতে চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যে মুসলিম ভোটার রয়েছেন প্রায় ৩০ শতাংশ। সেই ভোটের অধিকাংশ তৃণমূল পেয়েছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা রাজ্যের বাকি প্রায় ৭০ শতাংশ হিন্দু জনগণের মাত্র ১৫ শতাংশের ভোট পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে বিজেপির প্রতীকে যে ৩৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, তার গোটাটাই হিন্দু ভোট বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। যোগ-বিয়োগ করে পড়ে থাকে ১৭ শতাংশ হিন্দু ভোট। ওই পড়ে থাকা হিন্দু ভোট ও মমতার পক্ষে থাকা হিন্দু ভোটে সিঁদ কাটা গেলেই বাড়তি চার থেকে পাঁচ শতাংশ হিন্দু ভোট বিজেপির ঘরে চলে আসবে। সে ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের দিক থেকে রাজ্যে তৃণমূলকে টপকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপির কাছে।’’
তবে নির্বাচনে সার্বিক ভোট বাড়ানো মানেই আসন জেতা নয়। কারণ, নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের উপরে কোনও কেন্দ্রের জেতা-হারা অনেক সময়েই নির্ভর করে না। একমাত্র ওই বাড়তি চার-পাঁচ শতাংশ ভোট যদি বিজেপির পক্ষে রাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে সমান হারে বৃদ্ধি পায়, তা হলেই যুক্তিগত ভাবে বিজেপির পক্ষে তৃণমূলকে টপকে যাওয়া সম্ভব, নইলে নয়। অতীতের উদাহরণ বলছে, ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের লোকসভা নির্বাচনে মায়াবতীর দল ৯ শতাংশ ভোট পেয়েও একটিও আসন জিততে পারেনি। তাই ভোট বাড়ানোর পাশাপাশি আসন জেতার উপরেও সমান গুরুত্ব দিতে চাইছে গেরুয়া শিবির।