গত মার্চ মাসে গার্ডেনরিচে নির্মীয়মান একটি বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ায় ‘চাপে’ পড়েছিল শাসক তৃণমূল। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে সেই ওয়ার্ডেই বড় ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছে তারা। ভোটের দামামা বাজার প্রাক্-মুহূর্তে গার্ডেনরিচে ওই বাড়িটি ভেঙে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনার পর প্রত্যাশিত ভাবেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত কলকাতা পুরসভাকে। যে হেতু ঘটনাটি ঘটেছিল স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দর এলাকায়, তাই সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন তিনিই। কলকাতা বন্দর বিধানসভা এলাকার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ঘটনা ঘরে-বাইরে চাপে ফেলেছিল বন্দর এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বকেও। কিন্তু ৪ জুন গণনা শেষে দেখা যায়, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৩,৫৮৩ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। সেই ফলাফল জানার পরেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন মেয়র ফিরহাদ।
গার্ডেনরিচের ওই ঘটনার জেরে কলকাতা পুরসভার প্রশাসন তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তুলোধনা করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে অসুস্থ শরীরেও মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তাতেও বিরোধীদের আক্রমণ থেমে থাকেনি।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের সমর্থনে সিপিএম প্রার্থী করেছিল সায়রা শাহ হালিমকে। বামফ্রন্টের প্রত্যাশা ছিল, গার্ডেনরিচের বিপর্যয়ের ফলে ওই ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু ভোটারেরা শাসকদলের থেকে মুখ ফিরিয়ে বেছে নেবেন তাদের সংখ্যালঘু প্রার্থীকে। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, ওই ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সায়রা। অনেকটা পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে শেষ করেছেন বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী। তাই কলকাতা বন্দরের তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, গোটা রাজ্যের মতো ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডেও সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন রয়েছে তাঁদের দিকেই।
গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার পর সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর শামস ইকবাল। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘যে ঘটনা ঘটেছিল, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এক জন প্রোমোটারের ভুলের জন্য এটা হয়েছিল। তবে মানুষ এলাকায় উন্নয়ন দেখেছেন। সেটা তাঁদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাজে ভরসা রেখেছেন। তাই আমরা বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছি।’’
প্রসঙ্গত, ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা ২২,১৩৪। সেই ভোটের সিংহভাগ পেয়েছে শাসকদল তৃণমূল। তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১৪,৯৯৭। সিপিএম পেয়েছে ৪,৮৬৭ ভোট। আর বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে ১,৬০৩ ভোট।
তবে বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে মেয়র ফিরহাদের বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ব্যবধান কমেছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ৬৮,৫৫৪ ভোটে বিজেপির অবোধ কিশোর গুপ্তকে হারিয়েছিলেন ফিরহাদ। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান কমে হয়েছে ৪২,৮৯৩ ভোট। এই প্রসঙ্গে ৭৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ষষ্ঠী দাস বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে কলকাতা বন্দর বিধানসভায় কেন ব্যবধান কমেছে, সেই বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। দলীয় স্তরে আলোচনা করে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফাঁকফোকরগুলি যাতে দ্রুত মেরামত করা যায়, সেই কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।’’