• এক মাসের বদলে সাত দিনের ওষুধ, সঙ্কটে রাজ্যের বহু যক্ষ্মা রোগী
    আনন্দবাজার | ০৮ জুন ২০২৪
  • প্রয়োজন ষোলো আনা হলে মিলছে এক আনা। কখনও একেবারে শূন্য! যক্ষ্মার ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের এ হেন আচরণে প্রায় চার মাস ধরে নাজেহাল রাজ্য। শেষমেশ রাজ্য বাজেটে স্বাস্থ্য দফতরের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে ওষুধ কিনে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। তাতেও অবশ্য এক বারে এক মাসের বদলে আপাতত রোগীকে সাত দিনের ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

    যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, প্রথম দিকে ভাঁড়ার একেবারে শূন্য হওয়ায় যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, তার অনেকটাই সামাল দেওয়া গিয়েছে। ভোট মিটে যাওয়ায় এ বার কেন্দ্র ওষুধ সরবরাহ নিয়মিত করবে বলেও আশা করছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আশা করছি বটে, তবে অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করছে কেন্দ্র। কিন্তু তার জন্য তো রোগীর ওষুধ খাওয়া অনিয়মিত হলে চলবে না। তাই আমাদেরই ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’’ গত ১৮ মার্চ কেন্দ্র প্রথম চিঠি দিয়ে রাজ্যকে জানায়, তারা আপাতত যক্ষ্মার ওষুধ পাঠাতে পারবে না। ভোটের মুখে কেন্দ্রের এ হেন বার্তায় সঙ্কটে পড়ে স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, স্থানীয় বাজার থেকে ওষুধ কিনতে গিয়েও দেখা যায়, কাঁচামালের অভাবে কম ওষুধ তৈরি করছে প্রস্তুতকারী সংস্থা।

    শেষে বাজেট বরাদ্দ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে প্রায় ২৩ লক্ষ ‘৪ এফডিসি’ এবং প্রায় সাড়ে ২৭ লক্ষ ‘৩ এফডিসি’ ট্যাবলেট কিনতে একটি সংস্থাকে বরাত দেয় রাজ্য। সেই ওষুধের কিছুটা অংশ রাজ্যের ভাঁড়ারে ঢুকেছে। সেখান থেকেই রোগীদের এক সপ্তাহ করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। যদিও আগে ২৮ দিনের ওষুধ একসঙ্গে দেওয়া হত। আবার পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, হুগলির মতো জেলায় দেরিতে ওষুধ পৌঁছচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘আমরা যে ওষুধের বরাত দিয়েছি, তার একটি বড় অংশ কিছু দিনের মধ্যেই চলে আসবে। তখন আর সমস্যা থাকবে না।’’ স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, ১৫-২০ জুনের মধ্যে ওষুধ হাতে চলে এলে রোগীদের আবার আগের মতো একসঙ্গে ২৮ দিনের ওষুধ দেওয়া যাবে।

    রাজ্যে প্রতি বছর গড়ে এক লক্ষ দু’হাজার যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিত হন। আর, ফি-বছর ওষুধ পান ৫০-৬০ হাজার জন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যক্ষ্মা চিহ্নিত হওয়ার পরে প্রথম দু’মাস খেতে হয় ‘৪ এফডিসি’। পরের চার মাস খেতে হয় ‘৩ এফডিসি’। তবে একসঙ্গে প্রায় এক মাসের ওষুধ না পাওয়ায় অনেক রোগীকেই মাসে চার বার আসতে হচ্ছে হাসপাতালে।

    এক স্বাস্থ্যকর্তা জানাচ্ছেন, অনেক রোগীই অন্য জেলায় থাকেন। কিন্তু কলকাতায় এসে চিকিৎসা করান। কেউ আবার কলকাতার হাসপাতালে রোগ চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে এখানেই চিকিৎসককে দেখান। ওই রোগীদের জেলা থেকে কলকাতার হাসপাতালে এসে ওষুধ নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে মাসে চার বার আসতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)