• বর্ষা আসার আগেই প্রতিমা বিদেশে পাঠানোর ব্যস্ততা
    আজকাল | ০৮ জুন ২০২৪
  • রিয়া পাত্র কলকাতার ছোট একটা পাড়ায় এখন অকাল শরৎ। ফিনিশিং টাচ-এর শেষে তৈরি দুর্গা প্রতিমা। এবার তারা একে একে জাহাজে করে পাড়ি দেবে। কেউ যাবে বস্টন, কেউ কানাডা। মিন্টু পালের কারখানায় ব্যস্ততা তুঙ্গে। শনিবারই নিউ ইয়র্কে পাড়ি দিচ্ছে তাঁর তৈরি একচালার দুর্গা প্রতিমা। শুক্রবার রাতে কারখানায় বারবার শেষ মুহূর্তের প্যাকিং দেখছিলেন তিনি। কাঠ আর প্লাইউডের বাক্সে প্রতিমা সেট করে প্যাকিং করতে হয় শিল্পীদেরই। সেসব দেখে নিলেন খুঁটিয়ে। এটাই কি এবারের প্রথম ঠাকুর বিদেশে যাচ্ছে? কাজ করতে করতেই জানালেন, ইতিমধ্যে জাহাজে করে রওনা দিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিমা। মূলত ডিসেম্বরের শেষ কিম্বা জানুয়ারিতেই বিদেশ থেকে প্রতিমার অর্ডার চলে আসে। এপ্রিল-মে-জুন, সেসব অর্ডার একে একে শেষ করে ফেলেন শিল্পীরা। মিন্টু পালের যেমন এবার ৭-৮ ফুটের ১৫ টি, ১০ ফুটের ২টি এবং ২/২ এর ৪টি দুর্গা প্রতিমার অর্ডার এসেছে আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড,স্পেন এমনকি দুবাই থেকেও। কথা বলতে বলতেই টেক্সাস থেকে মেসেজ এল। পুজোর উদ্যোক্তারা মণ্ডপ সজ্জার জন্য চাইছেন কুলো, হাতপাখা, আর সঙ্গে সোলার কদমফুল। মিন্টু পালের কথায়, 'আগে এই চল এত বেশি ছিল না। আগে বিদেশের পুজোগুলো শুধু প্রতিমা নিত। এখন মণ্ডপ সজ্জার সামগ্রী নিয়ে যেতে চায়। গুগল থেকে ছবি ডাউনলোড করে পাঠিয়ে বলে ওই বিশেষ ধরণের সজ্জা তৈরি করে দিতে। করে পাঠাই।' প্রশান্ত পাল আবার শুধু সাজসজ্জা নয়, উদ্যোক্তাদের দাবি অনুযায়ী হারমোনিয়াম, ডুগি-তবলারও ব্যবস্থা করে দেন। তাঁর মতে, এবার এখনও অবধি প্রতিমার অর্ডার কিছুটা কম। আপাতত আমেরিকা, স্পেন, কানাডা এবং প্যারিসের জন্য প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত তিনি। সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য সোলার ওপর বিশেষ ছবিও আঁকছেন। বিদেশের পুজো উদ্যোক্তাদের ভাবনার কোনও বদল আসছে কি? শিল্পীরা কী বলছেন? তাঁদের মতে, মূলত ট্র্যাডিশনাল, টানা চোখের প্রতিমা চান সকলে। তবে কানাডার এক পুজোর উদ্যোক্তারা এবার এক চালার পরিবর্তে বড় ঠাকুর নিয়েছে। খানিকটা থিমের ধাঁচে। সঙ্গেই নিয়েছে ছোট এক চালার প্রতিমা, সিঁদুর খেলা হবে তাতেই। প্রতি বছর কুমোরটুলি থেকে শতাধিক ঠাকুর পাড়ি দেয় বিদেশে। সুদীর্ঘ পথে প্রতিমা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই কারণেই তৈরি হয় ফাইবার দিয়ে। জৈষ্ঠ্যের শেষে একে একে তারা জাহাজে উঠে পড়ছে। লম্বা পথ পেরিয়ে পৌঁছবে গন্তব্যে। জানা গেল, এক একটি পুজো ক্লাবে একই প্রতিমা অন্তত ৫ বছর পুজো হয়। কেউ কেউ শিল্পীর থেকে এক্সট্রা গয়না, শাড়ি নিয়ে নেন প্রথমেই। পরে প্রয়োজন মতো বদলে নেওয়া হয়। তারপর? অন্তত ৪-৫ বছর পুজোর পর, অন্য কোনও ছোট কিম্বা নতুন পুজো গোষ্ঠী ওই ঠাকুর কিনে নেয়, তুলনামূলক ভাবে বড় পুজোর ক্লাব আবার যোগাযোগ করে কুমোরটুলিতে, নতুন প্রতিমার জন্য।
  • Link to this news (আজকাল)